চীনভিত্তিক সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানি বাইটডান্স টিকটক অ্যাপ দিয়ে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়েছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টিসান টেকনোলজি নামের একটি ডিভাইস নির্মাতার সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্মার্টফোন ব্যবসায় নামতে যাচ্ছে। চীনের স্মার্টফোন ডিভাইস বাজারের তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী স্মার্টিসান টেকনোলজি। খবর রয়টার্স।
বাইটডান্সের এক মুখপাত্র জানান, তারা সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক, ভিডিও সেবা ও সংবাদভিত্তিক অ্যাপের কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি নতুন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে স্মার্টিসান টেকনোলজির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্মার্টফোন তৈরি ও উন্মোচনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
ওই মুখপাত্রের ভাষ্য, স্মার্টিসান টেকনোলজি কার্যক্রম শুরুর পর স্মার্টফোন উন্নয়নে কাজ করছে। বাইটডান্সের চুক্তি প্রতিষ্ঠানটির পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। এর ফলে পুরনো গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি।
গত সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইটডান্স সাত মাস ধরে স্মার্টফোন উন্মোচনে কাজ করছে। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানটির এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্মার্টিসান টেকনোলজির সাবেক এক নির্বাহী উ দেউঝু।
চলতি বছরের শুরুর দিকে স্মার্টিসান টেকনোলজির কয়েক সেট পেটেন্ট অধিগ্রহণ করেছিল বাইটডান্স। পাশাপাশি ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু কর্মী এরই মধ্যে বাইটডান্সের হয়ে কাজ শুরু করেছেন। তখন বাইটডান্সের পক্ষ থেকে স্মার্টিসান টেকনোলজির কর্মী নিয়োগের বিষয়টিকে সাধারণ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
টিকটক দিয়ে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পায় বাইটডান্স। চীনা ইন্টারনেট জায়ান্ট বাইদু ও টেনসেন্ট হোল্ডিংসের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাইটডান্সের নিয়ন্ত্রণে টিকটক ছাড়াও দুইন নামে শর্ট ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ রয়েছে। চীনে এ অ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ৩০ কোটি ছাড়িয়েছে।
গত জুনে বাইটডান্সের বিপণন ব্যবস্থাপক ঝি ইং জানিয়েছিলেন, শুধু চীনেই নয়, টিকটক ও দুইন অ্যাপের ব্যবহারকারী বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এ দুই অ্যাপের কার্যক্রম নিয়ে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি দেশে তাদের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। যদিও নিজেদের অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
গত মার্চে টিকটক অ্যাপের ডাউনলোড শতকোটি ছাড়িয়ে যায়। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয় প্লাটফর্মে ডাউনলোডের এ মাইলফলক অতিক্রম করে বাইটডান্সের তৈরি এ অ্যাপ। টিকটকের মাধ্যমে গান, সিনেমার সংলাপসহ বিভিন্ন মজাদার অডিওর সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা যায়। যে কারণে চালুর খুব অল্প সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টিকটক অ্যাপ। তবে এর বিরুদ্ধে নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও বানিয়ে ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। ভারতে এরই মধ্যে অ্যাপটি বন্ধের দাবি উঠেছে।
সম্প্রতি শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষকে ৫৭ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিল টিকটক অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে। শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্যসংক্রান্ত বিষয়ে এর আগে আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে এত বড় অংকের জরিমানা গুনতে হয়নি।
টিকটকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতীয়দের তথ্য সংগ্রহ এবং তা চীনে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দেশটির ভারতের লোকসভায় জিরো আওয়ারে বক্তৃতা দেয়ার সময় টিকটক অ্যাপের কার্যক্রমকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর।
তিনি বলেন, তথ্যের সুরক্ষায় এখন পর্যন্ত ভারতের উল্লেখযোগ্য কোনো কাঠামো নেই। এক্ষেত্রে তথ্য বেহাত হওয়া এবং নজরদারির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।