২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) সরবরাহ ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৬ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বাজারের ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীনভিত্তিক লেনোভো। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার প্রকাশিত গত মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী পিসি সরবরাহ ২৬ কোটি ১০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা ২০১৮ সালের চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
বিবৃতিতে গার্টনারের জ্যেষ্ঠ প্রধান বিশ্লেষক মিকাকো কিতাগাওয়া বলেন, শুধু আইফোন বিক্রি প্রবৃদ্ধিতেই নয়; বৈশ্বিক পিসি বাজারের প্রবৃদ্ধিতেও যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। গত বছর পিসি বাজারে আরো বেশি সরবরাহ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। ২০১১ সালে বৈশ্বিক পিসি বাজার প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য সরবরাহ প্রবৃদ্ধি পরখ করেছিল। ওই সময় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোয় উইন্ডোজ ১০ হালনাগাদের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে কম্পিউটিংয়ের সুযোগ-সুবিধা মোবাইল ডিভাইসে যুক্ত হতে থাকলে পিসি বাজারে চাহিদা কমে যায়।
অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক পিসি বাজারের ২২ দশমিক ২ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এইচপি। বাজারটির ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে নিয়ে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ডেল। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে লেনোভো, এইচপি ও ডেল মিলে বৈশ্বিক পিসি বাজারের ৬৫ শতাংশ দখলে নিয়েছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের ৬১ শতাংশের চেয়ে বেশি।
গত বছর পিসি বাজারের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধের জেরে প্রসেসর সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে নির্মাতারা সংকটে পড়ে এবং পিসি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে মোবাইল ডিভাইসে কম্পিউটিংয়ের সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যাওয়া। গ্রাহকরাও পিসির চেয়ে তুলনামূলক বড় ডিসপ্লের মোবাইল ডিভাইসের প্রতি ঝুঁকতে থাকেন। তবে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেও গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে শীর্ষ তিন পিসি নির্মাতা সম্মিলিতভাবে বাজার দখল বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বৈশ্বিক পিসি বাজারের জন্য বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিকাকো কিতাগাওয়া বলেন, আমরা বৈশ্বিক পিসি বাজারে চলতি বছরজুড়েও প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি। কারণ চলতি সপ্তাহে উইন্ডোজ ৭ সমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করেছে মাইক্রোসফট। বিশ্বব্যাপী এখনো ব্যবহারকারী বিবেচনায় উইন্ডোজ ৭ পিসি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। চীন ও এশিয়াপ্যাসিফিক অঞ্চলের অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন উইন্ডোজ ১০ আপগ্রেড করতে হবে। এতে বছরজুড়ে উইন্ডোজ ১০ পিসির চাহিদা বাড়তি থাকবে।
তিনি বলেন, উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের রিফ্রেশ সাইকেলের কারণে পিসি বিক্রি বাড়বে। অনেকেই পুরনো উইন্ডোজ পিসি ছেড়ে এখন উইন্ডোজ ১০ পিসি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবেন। যে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পিসির চাহিদা বাড়বে।
গত বছরজুড়ে ইন্টেল সিপিইউর সরবরাহ ঘাটতি পিসি নির্মাতাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছিল। তবে সিপিইউ নির্মাতা অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস (এএমডি) ও কোয়ালকম মিলে সরবরাহ ঘাটতি পূরণে কাজ করায় সংকট কিছুটা কমেছে। চলতি বছর সিপিইউ সরবরাহ নিয়ে সংকট দেখা দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গত বছরজুড়ে ইন্টেল সিপিইউর সংকট অন্য সিপিইউ নির্মাতাদের জন্য বড় ধরনের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বৈশ্বিক পিসি বাজারের শীর্ষ নির্মাতাদের মধ্যে একমাত্র লেনোভো বিশ্বের সব অঞ্চলে সরবরাহ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই লেনোভোর ডেস্কটপ পিসি সরবরাহ এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে টানা তৃতীয় প্রান্তিকের মতো এইচপির পিসি সরবরাহ বেড়েছে। যে কারণে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার বাজারে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে লেনোভো ও ডেলের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ডেলের পিসি সরবরাহ ১ কোটি ২০ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে। বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে।