স্মার্টফোনের বাজারে দ্বন্দ্বের শুরু প্রসেসর নিয়েই। প্রথমদিকে মিডিয়াটেকের চিপসেট দিয়েই হ্যান্ডসেট তৈরি করত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে বাজার দখলে নেয় কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন। এর পর থেকে মিডিয়াটেকের ফ্যান খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে! ফোন কেনার ক্ষেত্রে তাই কোন প্রসেসরের ফোন ভালো, কেন এ প্রসেসর নেব এ নিয়ে দ্বিধা, দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে যায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের।
মিডিয়াটেক কী?
মিডিয়াটেক মূলত তাইওয়ানভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালের ২৮ মে এর যাত্রা হয়। মিডিয়াটেক চিপসেটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে হেলিওর মতো শক্তিশালী এবং সুলভ মূল্যের চিপসেটও তৈরি করছে। মূলত সনির স্মার্টফোন এবং চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কম দামি ফোনে এ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। বেঞ্চ মার্ক পরীক্ষায় মিডিয়াটেকের নতুন প্রসেসর এক্স ২০ স্ন্যাপড্রাগন ৮২০ এবং এক্সিনোস ৮৮৯০ এর সমতুল্য হলেও ফ্ল্যাগশিপ লেভেলের ফোনে এখনো জায়গা করে নিতে পারেনি এটি।
মিডিয়াটেকের বৈশিষ্ট্য
খুব বেশি সুলভ মূল্যের না বেশি ব্যাটারি খরচ করে হিটিং ইস্যু খুবই বেশি, ফোন দ্রুতই গরম হয়ে যায় প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রেও সময় বেশি লাগে
স্ন্যাপড্রাগন কী?
কোয়ালকমের একটি উৎপাদিত পণ্য হচ্ছে স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট। কোয়ালকম মূলত আমেরিকাভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান। এটি সেমিকন্ডাক্টর, সফটওয়্যার এবং ওয়্যারলেস প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্য তৈরি করে থাকে। স্মার্টফোনের বাজারে থাকা এমআই ফাইভ, ওয়ানপ্লাস থ্রি, এলজি জি ফাইভসহ বিভিন্ন প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেটে স্ন্যাপড্রাগনের ৮২০ চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। স্যামসাং ও বর্তমানে এক্সিনোস চিপসেট ব্যবহার করা থেকে সরে এসে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ব্যবহার করছে।
স্ন্যাপড্রাগনের বৈশিষ্ট্য
সব থেকে নিরাপদ চিপসেট খুব কম ব্যাটারি খরচ করে থাকে ইন্টেল ও মিডিয়াটেকের প্রসেসর তুলনায় কম গরম হয় স্ন্যাপড্রাগনের অ্যাড্রেনো ও জিপিইউও কোয়ালকম নির্মিত
স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেকের পার্থক্য
১. উৎপাদন কেন্দ্র: মিডিয়াটেক মূলত তাইওয়ানভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন কোয়ালকম নির্মিত প্রসেসর। প্রসেসর নির্মাণের পাশাপাশি কোয়ালকম প্রযুক্তিগত আরো অনেক কাজ করে থাকে। ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কোয়ালকমের যাত্রা শুরু হয়।
২. প্রসেসর কোরের সংখ্যা: মিডিয়াটেক ও স্ন্যাপড্রাগন দুটোই মাল্টিকোর (১-২-৪-৬-৮-১০) প্রসেসর। এ প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি মিডিয়াটেক ১২ কোরের চিপসেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালাচ্ছে। তবে কোরের সংখ্যার চেয়ে কোরের কার্যক্ষমতা নিয়েই ভাবা উচিত।
৩. সিপিইউ ও জিপিইউ: সিপিইউর দিক থেকে খুব বেশি পার্থক্য না হলেও জিপিইউর দিক থেকে এগিয়ে স্ন্যাপড্রাগন। কেননা স্ন্যাপড্রাগনের জিপিইউ ভালো গ্রাফিক্স প্রদানে সক্ষম।
৪. ব্যাটারির ব্যবহার: পারফরম্যান্সের দিক থেকে মিডিয়াটেক ও স্ন্যাপড্রাগন দুটোই ভালো এবং মাল্টি টাস্কিংয়ে ভালো ফল দেয়। তবে ব্যাটারি ব্যবহারে স্ন্যাপড্রাগন মিডিয়াটেকের থেকে এগিয়ে।
৫. ফোন গরম হয়ে যাওয়া: মিডিয়াটেক প্রসেসরের হ্যান্ডসেটের তুলনায় স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের হ্যান্ডসেট কম গরম হয়। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের অন্যতম প্রধান অভিযোগ এ হিটিং ইস্যু।
৬. প্রসেসরভিত্তিক ফোনের দাম: মিডিয়াটেক প্রসেসরের হ্যান্ডসেটগুলোর দাম স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের হ্যান্ডসেটের তুলনায় কম। তবে জিনিস যেটা ভালো দাম তার একটু বেশি—এ নীতিতেই এখন বিশ্বাস করেন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা।