গত প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও ৩ শতাংশ বাজার শেয়ার হারিয়েছে স্যামসাং। ফোল্ডেবল ফোনের মাধ্যমে শীর্ষস্থান ধরে রাখা এবং বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। এমনকি বিক্রি বাড়াতে ফোল্ডেবল ফোনের দাম কমানোর মতো আগ্রাসী সিদ্ধান্তও নিতে যাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে নতুন ডিজাইনের এ স্মার্টফোনে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির আশা কম দামে টেকসই এ ফোন গ্রাহকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে। খবর এপি।
সম্প্রতি বাজারে দুটি নতুন ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উন্মুক্ত করেছে স্যামসাং। ফোল্ডেবল অবস্থায় এটিকে ফোন হিসেবে এবং আনফোল্ডেড অবস্থায় স্ট্যান্ডের ওপর রেখে ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
সবচেয়ে বড় ডিভাইস গ্যালাক্সি ফোল্ড থ্রি-তে ৭ দশমিক ৬ ইঞ্চির ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল্য ১ হাজার ৮০০ ডলার, যা গত বছরের মডেলের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। অপর ডিভাইস গ্যালাক্সি ফ্লিপ থ্রি দেখতে ফ্লিপ ফোনের মতো হলেও এটিকে ক্ল্যামশেল অবস্থা থেকে খুললে ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের ফোনে পরিণত হবে। এর বাজারমূল্য ১ হাজার ডলার, যা গত বছরের অরিজিনাল মডেলের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।
নতুন ফোনের পাশাপাশি গুগলের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত সফটওয়্যার টান্ডেম ব্যবহার করে প্রথম স্মার্টওয়াচও উন্মুক্ত করেছে স্যামসাং। ওয়্যারেবলের বাজারে অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যেই একত্রে কাজ করছে এ দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট।
২০১৯ সালে বাজারে প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নিয়ে আসে স্যামসাং। এরপর থেকেই এ ক্যাটাগরির স্মার্টফোনগুলোর প্রযুক্তি পরিবর্তনে কাজ শুরু করে। মূলত গ্রাহকরা যাতে পুরনো ফোন আঁকড়ে রাখার পরিবর্তে নতুন ফোন কিনতে বাধ্য হয়, সেজন্যই এ উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে স্মার্টফোনের বাজারে ফোল্ডেবল ফোন তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) তথ্যানুযায়ী, গত বছর মাত্র ২০ লাখ ইউনিট ফোল্ডেবল স্মার্টফোন সরবরাহ করা হয়েছে। গত বছর বিশ্বে মোট ১৩০ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের এ হার খুবই নগণ্য বলে জানায় আইডিসি। আইডিসির বিশ্লেষক নাবিলা পোপাল বলেন, অধিক মূল্যের কারণেই ফোল্ডেবল ফোনের বিক্রি কমে গেছে। অধিকাংশ মানুষ এটি ব্যবহারের খুব একটা প্রয়োজন দেখেন না। অন্তত শুধু ফোল্ডিংয়ের জন্য কেউ অতিরিক্ত ১ হাজার ডলার খরচ করবেন না।
পোপাল মনে করেন, ফোল্ডেবল ফোনের বিক্রি বাড়াতে স্যামসাং দাম কমানোর যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেটা এখনো অধিকাংশ ভোক্তাকে ফোনের জন্য অর্থ খরচ সীমার থেকেও বেশি। এ কারণে চলতি বছর ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজারজাত ৬০ থেকে ৭০ লাখের বেশি হবে না বলে ধারণা করছে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি)।
উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ফোল্ডেবল ফোন কতটা টেকসই সে বিষয়েও গ্রাহকদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যার কারণে ২০১৯ সালে প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে আনলেও ডিসপ্লে ফুলে যাওয়া ও ফ্লিকারিং সমস্যার কারণে অনেকটাই পিছিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। নতুন যে দুটি স্মার্টফোন বাজারে আনা হয়েছে, সেগুলো নির্মাণে স্যামসাং অধিক শক্তিশালী গ্লাস ব্যবহারের পাশাপাশি এতে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট কোটিং ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে ফোন দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবে বলে আসা সংশ্লিষ্টদের।