মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ও চিপ নির্মাতা কোয়ালকমের মধ্যে রয়্যালটি ও পেটেন্ট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের এ দ্বন্দ্ব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার দুই প্রতিষ্ঠান রয়্যালটি ও পেটেন্ট নিয়ে টানা কয়েক বছর ধরে চলা দ্বন্দ্বের ইতি টানতে সক্ষম হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে বিনা অনুমতিতে কোয়ালকমের চিপ আইফোনে ব্যবহার করায় যে দ্বন্দ্বের শুরু, তা নিষ্পতিতে পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
রয়্যালটি ও পেটেন্ট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে অ্যাপল তাদের জনপ্রিয় আইফোনে কোয়ালকমের চিপ ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছিল। অন্যদিকে কোয়ালকমের পক্ষ থেকে অ্যাপলের জন্য মডেম চিপ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে আইফোন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলাও করা হয়। গত ডিসেম্বরে কোয়ালকমের দুটি পেটেন্ট লঙ্ঘনের জেরে চীনে আইফোনের সাতটি মডেল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন দেশটির একটি আদালত। শুধু চীনে নয়, রয়্যালটি ও পেটেন্ট দ্বন্দ্বের জেরে অ্যাপল-কোয়ালকম পরস্পরের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডজনের বেশি মামলা করেছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা কয়েক বছর ধরে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে উভয় প্রতিষ্ঠান ব্যবসার দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ব্যবসার দিক বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলমান পরস্পরবিরোধী মামলা নিষ্পত্তিতে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান দুটি পরস্পরের মধ্যে ব্যবসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি ছয় বছর মেয়াদি লাইসেন্সিং চুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি সরবরাহ চুক্তি সই করেছে।
বিবৃতি অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান মামলা নিষ্পত্তির জন্য কোয়ালকমকে অর্থ পরিশোধ করবে অ্যাপল। তবে অংকটা প্রকাশ করা হয়নি।
মামলা নিষ্পত্তির আগে উভয় প্রতিষ্ঠানই স্বপক্ষে জোরালো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে অন্য পক্ষকে আক্রমণ করেছিল। অ্যাপলের আইনজীবী রুফিন কর্ডেল অপ্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে রয়্যালটি আদায়ের অভিযোগ তোলেন কোয়ালকমের বিরুদ্ধে। চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে রয়্যালটি প্রদানের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে অভিমত দেন তিনি।
অ্যাপলের আইনজীবীর অভিযোগের জবাবে কোয়ালকমের আইনজীবী ইভান চেসলার বলেন, কোনো প্রকার অর্থ পরিশোধ কিংবা অনুমতি ছাড়াই কোয়ালকমের তৈরি প্রযুক্তি নিজেদের ডিভাইসে ব্যবহার করে পেটেন্ট লঙ্ঘন করেছে অ্যাপল, যা প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে চীন ও জার্মানির বাজারে কোয়ালকমের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, এমন আইফোনের মডেলগুলো বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
অ্যাপলের সঙ্গে পেটেন্ট দ্বন্দ্বের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল কোয়ালকম। কারণ প্রতিষ্ঠানটি তাদের আইফোনে কোয়ালকমের চিপ ব্যবহার বন্ধ করেছিল। তবে রয়্যালটি ও পেটেন্ট দ্বন্দ্বের অবসানের খবর প্রকাশের পর পরই গত মঙ্গলবার কোয়ালকমের শেয়ারদর ২২ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায় ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে কোয়ালকম গত বছরে দেড় হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, কোয়ালকমের ব্যবসা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অ্যাপল-কোয়ালকম মামলার নিষ্পত্তি হলেও চাপে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপল ভবিষ্যতে কোয়ালকমের কাছ থেকে আগের মতো মডেম চিপ না-ও কিনতে পারে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেরাই মডেম চিপ উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই লক্ষ্যে ওয়্যারলেস প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে শুরু করেছে অ্যাপল। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। অ্যাপল এ খাতে নাম লেখালে তা কোয়ালকমের মডেম চিপ ব্যবসার জন্য নেতিবাচক হবে।