স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সমাধান নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, আকার-আয়তন থেকে শুরু করে নানামুখী বিবর্তন ঘটেছে স্মার্টফোনে ব্যবহৃত উপকরণে। ডিভাইসে মেটাল, গ্লাস, লেদার, সিরামিক, এমনকি কাগজ বা এরকম বিভিন্ন রকম উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ভালো ও মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে।
যখনই বাজারের নতুন কোনো ম্যাটেরিলায় ব্যবহার করা শুরু হয়, তখন ব্র্যান্ডগুলো+ চেষ্টা করে সেই ম্যাটেরিলায়ের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে। এর ফলে, ক্রেতারাও বাজারে অনেক বিকল্প থেকে তাদের পছন্দের ডিভাইস বেছে নিতে পারেন। উদ্ভাবনের ধারাবাহিকতায়, এখন পর্যন্ত স্মার্টফোনের ডিজাইনার স্মার্টফোনে নতুন নতুন সম্ভাবনার খোঁজ করে যাচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও যেখানে বাজারে মেটাল ডিভাইসের প্রচলন ছিলো, সেখানে এখন ফ্ল্যাগশিপ সেগমেন্টের ডিভাইসগুলোতে গ্লাস ফিনিশ ডিজাইনের প্রভাব বাড়ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মেটাল ডিভাইসগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়ামের সাথে অ্যালুমিনিয়ামের মিশ্রণ ব্যবহার করা হতো, ডিভাইসের এক্সটেরিয়রকে মজবুত করতে টাইটানিয়ামের মতো মেটাল ব্যবহার করা হয়। মেটাল ডিভাইসগুলোর জনপ্রিয়তার পেছনে প্রধান কারণ এর ডিজাইন ও প্রিমিয়াম লুক-অ্যান্ড-ফিল। মেটাল ডিভাইসগুলোর উপাদান হিসেবে সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহার করা হয় এদের নমনীয়তা বৃদ্ধি করার জন্য, যেন স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিভাইসটিকে পছন্দের আকৃতিতে নিয়ে আসতে পারেন। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো এদের ক্রেতাদের চাহিদাকেও গুরুত্ব দিতে সক্ষম হন। মেটাল ডিভাইসগুলো তাপ সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে, এই একটি সুবিধার ওপর নির্ভর করে একে বিচার করা যাবে না, যেখানে প্রসেসর ও ফোনের অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করার জন্য এই ম্যাটেরিয়ালকেই দায়ী করা হয়। এছাড়াও, মেটাল উপাদানগুলো হাই-ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ওয়েভস ব্লক করে ফেলে, ওয়াইফাই ও এলটিই ডেটা কানেকশনের ব্যবহৃত সিগনালের কার্যকারিতা দুর্বল করে ফেলে। স্বাভাবিকভাবে এর পর মেটালের এই সমস্যা সমাধান করার জন্য গ্লাস সল্যুশন নিয়ে আসা হয়। সময়ের সাথে সাথে এটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোর বহুল ব্যবহৃত উপাদানে পরিণত হয়; যার মধ্যে রয়েছে আইফোন ৮ এর মতো অ্যাপল ডিভাইস।
ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোন ব্যবহারে অনন্য অনুভূতি দিতে বিভিন্ন রকম ডিজাইনের মধ্যে গ্লাস ডিজাইন ব্যবহার শুরু করা হয়। যাই হোক, গ্লাসের বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই এর স্থায়িত্বের কথা আসে, কারণ স্বাভাবিকভাবেই গ্লাস ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর এই ভঙ্গুর প্রকৃতির জন্যই ডিভাইসগুলোতে মেটাল উপাদান ব্যবহার করার প্রচলন বেড়েছিল। এরপর, স্মার্টফোন উৎপাদকরা গ্লাসকে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত করতে উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রযুক্তি নিয়ে আসেন। ডিভাইসে বাকি উপাদান ব্যবহারের চেয়ে গ্লাস ব্যবহার করার বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। যেমন: অন্যান্য মেটাল উপাদানের চেয়ে গ্লাস গলিয়ে ফেলা অনেক বেশি সহজ, ফলে এটা অনেক বেশি স্মুথ করা যায়; যা শক্ত অ্যালুমিনিয়ামের বিপরীতে গ্লাসের স্বচ্ছতাকে আরও ভালোভাবে আমাদের সামনে হাজির করতে পারে। এতে করে ফোন হাতে ধরা বা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আরামদায়ক অনুভূতি পান ব্যবহারকারীরা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্লাস আরএফ (রেডিও ফিলোয়েন্সি) ট্রান্সমিশন-বান্ধব উপাদান; অর্থাৎ এটি এলটিই, ওয়াইফাই বা ব্লুটুথ সিগনাল চলাচলের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না; ফলে ব্যবহারকারীরা এসব ক্ষেত্রে স্মুথ কানেক্টিভিটি পেতে পারেন। যদিও এর কিছু অসুবিধাও আছে। তবে সব কিছুর পর ক্রেতারাও গ্লাসের ভঙ্গুরতা নিয়ে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করেন। তার ওপর এই উপাদান আঙুলের ছাপকে দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে, যা ডিভাইসটি ব্যবহারে অস্বাচ্ছন্দ্যদায়ক অনুভূতি তৈরি করে।
এই বিষয়গুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উদ্ভাবন ও সমাধান নিয়ে আসতে এবং গ্লাস ডিজাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল লাইফস্টাইল্কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে, স্মার্টফোন উৎপাদকরা নিত্যনতুন উপায় নিয়ে হাজির হচ্ছেন। যেমন, অপোর মত স্মার্ট ডিভাইস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে দুর্দান্ত অপো গ্লো ফিনিশ, যা সূক্ষ্ম ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক অনুভুতি নিশ্চিত করতে ফ্রেশ ম্যাট ফিনিশের পাশাপাশি দিচ্ছে গ্লসি ও আঙুলের ছাপ মুক্ত ব্যাককাভার।
অপো এর নিজস্ব প্রক্রিয়ায় অপো গ্লো ডিজাইন উৎপাদন করে থাকে, যা স্মার্টফোনের হাই-এন্ড প্রিমিয়াম লুক নিশ্চিত করে। অপো গ্লো প্রসেস অপো’র ডিজাইন করা অনন্য এন্টি-গ্লেয়ার (এজি) গ্লাস প্রসেস, যেখানে মনে হবে হীরা গ্লাসের গায়ের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। সবসময় পরিবর্তনশীল কালার ইফেক্ট নিশ্চিত করতে পিকাসাস ফিল্ম, দ্য ফ্রেসনেল লেন্স টেক্সচার এবং দ্য রিফ্লেকটিভ ইনডিয়াম কোটিংয়ের পাশাপাশি স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রথম অপো ব্যবহার করেছে ‘স্টেকড স্ট্রিমার’র মতো ডায়মন্ড স্পেকট্রাম প্রসেস।
অনেকগুলো ন্যানো স্তরের ফিল্মকে অপটিক্যাল রিফ্লেকটিভ ফিল্মে পরিণত করতে সুপারইম্পোজ ও প্রসারিত করা হয়, যেন একটি রঙিন রিফ্লেকটিভ ইফেক্ট উৎপন্ন করা যায়। প্রতিটি স্তরে আলাদা রিফ্লেকটিভ ইনডেক্স তৈরি করার জন্য পিকাসাস ফিল্ম রিফ্লেকটিভ মাল্টি কালারড ইফেক্ট উৎপাদন করে। এরপর রঙকে সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধ করতে ও অ্যাঙ্গুলার ডিজকালারেশন ইফেক্ট তৈরি করতে এর সাথে যুক্ত করা হয় ফ্রেসনেল লেন্স টেক্সচার। এরপর পিকাসাস ফিল্মের কালার রিফ্লেকটিভিটিকে আরও জোড়ালো করতে এবং রঙ ও এর উজ্জ্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয় রিফ্লেকটিভ ইনডিয়াম কোটিং।
ডিভাইসটির সবগুলো সারফেসের মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর সিএমএফ’র (কালার, ম্যাটেরিয়াল, ফিনিশ) সর্বশেষ স্তরটি ব্যাককাভারে আলো ধারণ করার মাধ্যমে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে; আর এজন্য উল্লেখ করতে হবে হাজারো ন্যানো আকারের ক্রিস্টাল ফরম্যাশনের কথা। ব্যবহারকারীরা উজ্জ্বল আলোর নিচে ফোনটি ঘুরিয়ে দেখলে, আর এতেই পেছনের সূক্ষ্ম রঙের পরিবর্তন স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। পাশাপাশি, অপো গ্লো ডিজাইনে কেসিংকে বিভিন্ন স্তরের কিউরিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৯৯.৯ শতাংশ ভ্যাকুয়ামে পরিণত করা হয়, যেন এর ব্যাককাভার আঙুলের ছাপ বা স্ক্র্যাচ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এতে করে ডিভাইসটি আকর্ষণীয় হবে, পাশাপাশি স্মার্ট ডিভাইস দাগ ও ময়লা থেকেও মুক্ত থাকবে।
স্মার্টফোনটির সারফেসের ন্যানোস্তরে লাখো হীরার উজ্জ্বলতা জ্বলজ্বল করবে, যেখানে টেকসই স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে এর স্ক্র্যাচ ও ক্ষয়রোধী গ্লাস। এর মাধ্যমে কেবল ডিভাইসটির স্বতন্ত্র নান্দনিক বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হবে তা নয়, পাশাপশি গ্লাস বডির সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলোরও সমাধান নিয়ে হাজির হবে এটি।
দুর্দান্ত এ ইফেক্ট ফুটিয়ে তোলা মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়। অপো’র উৎপাদকরা অপো গ্লো টেকনিক নিয়ে আসার সময় অ্যান্টি-গ্লেয়ার গ্লাসের ওপর পুরো গবেষণা সম্পন্ন করে। যার ফলশ্রুতিতে, ইঞ্জিনিয়াররা নকশাকাটা প্রক্রিয়ার মতো এরকম জটিল ব্যবহারের মধ্যেও আলো প্রতিফলনের উপযোগী ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল স্ট্রাকচার তৈরি করতে সক্ষম হয়। সাধারণ এজি (এন্টি-গ্লেয়ার) গ্লাসের ক্রিস্টাল স্ট্রাকচারগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভিন্ন দিকে আলোর প্রতিফলন ঘটায়, ফলে এটি ঘোলা ইফেক্ট তৈরি করে। অন্যদিকে, ক্রিস্টাল স্ট্রাকচারগুলো ছয়-দিকবিশিষ্ঠ কোণ তৈরি করে, যার প্রতিটি কোণ আলোর প্রতিফলন ঘটায়, ফলে কোণগুলো আলোর কারণে উজ্জ্বল হয়ে থাকে। কার্যকরী ফল নিশ্চিতে ইঞ্জিনিয়াররা ৩০টি আলাদা এচিং ফর্মুলার ওপর সারা মাস জুড়ে নিরীক্ষা চালায় এবং পিরামিড-সদৃশ স্ট্রাকচার বের করে। জটিলভাবে করা এই চেষ্টা ও নীরিক্ষার পর গ্লো ডিজাইন তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নিয়ে হাজির হয়। এ ধরণের জটিল প্রক্রিয়ার পর অপো নিয়ে আসে সবার চেয়ে উজ্জ্বল গ্লাস, যা সবচেয়ে বেশি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
এখন পর্যন্ত, এই স্মার্ট ডিভাইস উৎপাদক নিয়ে এসেছে নান্দনিকতায় ভরপুর উদ্ভাবনী গ্লাস ব্যাক। সর্বশেষ অপোর নতুন এফ২১এস প্রো-তে ব্যবহার করা হয়েছে অপো গ্লো টেকনিকের দুর্দান্ত গ্র্যাডিয়েন্ট ডিজাইন, যা ব্যবহারকারীদের দিচ্ছে অনন্য রঙ-সমৃদ্ধ গ্লাস ব্যাক। এতে ব্যবহার করা হয়েছে এস#৭৫ রঙ, যা আসলে রঙ ও গ্র্যাডিয়েন্টের অনন্য সমন্বয়। এই সমন্বিত রঙটি আসলে বিভিন্ন আঙ্গিকের পিঙ্কের বিভিন্ন শেড, গ্রিন ও গ্লোল্ডেন কালারের একটি সম্মিলিত রঙকে তুলে ধরে, যা ডিভাইসটির নান্দনিক লুক ও সবার চেয়ে আলাদা স্টাইল নিশ্চিত করে। ডিভাইসটি এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৯,৯৯০ টাকায়। ডিভাইসটি আসলেই অপো গ্লো’র বিশেষ আকর্ষণ, যা অনিন্দ্য নান্দনিক ও তুলনাহীনতার সমন্বয়।
সবশেষে এটা বলা যায় যে, গ্লাসের ক্ষেত্রে অপো গ্লো টেকনিক আপনাকে নিশ্চিত করবে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতুলনীয় ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা, যেখানে ক্রেতাদের জন্য নিশ্চিত হবে কোয়ালিটি, স্টাইল ও ফ্ল্যাগশিপ অভিজ্ঞতা।