পশ্চিমের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরবরাহকারীরা সিঙ্গাপুরে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। মূলত মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে চাহিদা মেটাতে ও সরবরাহ চেইনের সংকট দূর করতেই এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশটিতে ওয়েফার প্লান্টের সক্ষমতা বাড়াতে ৪০ কোটি ইউরো বা ৪৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ফ্রান্সের সাবস্ট্রেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সইটেক। অন্যদিকে ৬০ কোটি সিঙ্গাপুর ডলার বা ৪৫ কোটি ডলারে নতুন কারখানা স্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস।
উত্তর-পূর্ব সিঙ্গাপুরের শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের অন্যতম স্থান হচ্ছে পাসির রিস ওয়াফার ফ্যাব পার্ক। সেখানে থাকা কারখানার পরিধি বাড়াচ্ছে সইটেক। ২০২৪ সাল নাগাদ সইটেকের এ প্রকল্প সম্পন্ন হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। এর মাধ্যমে ৪৫ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
দেশটিতে সইটেকের যে কারখানা রয়েছে সেখানে সিলিকন-অন-ইনসুলেটর (এসওআই) তৈরি করা হয়ে থাকে। কারখানা সম্প্রসারণে ফলে ৩০০ মিলিমিটার আকৃতির এসওআই ওয়াফারের উৎপাদন সক্ষমতা বছরে ২০ লাখ ইউনিট ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। ২০২৬ সালের মধ্যে কারখানা কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৬০০ তে উন্নীত করার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি। কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সে সঙ্গে চলতি বছর মন্দার শঙ্কায় চাহিদা পুনরায় কমতেও শুরু করেছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে শিল্প সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেমিকন্ডাক্টর ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস এক পূর্বাভাসে জানায়, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৫৬ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। চার বছরের মধ্যে বার্ষিক হিসেবে এটি প্রথম অবনমনের পূর্বাভাস, কিন্তু সইটেকের প্রধান নির্বাহী পিয়েরে বার্নাবে কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে আশাবাদী।
নিক্কেই এশিয়ার কাছে পাঠানো লিখিত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিও তার ব্যতিক্রম নয়। এজন্য সইটেক দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সিঙ্গাপুরে থাকা কারখানার পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর খাতে যে দুরবস্থা চলছে তাতে সইটেকের পরিষেবা গ্রহণকারীদের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বিশেষ করে মোবাইল কমিউনিকেশন, অটোমোটিভ ও শিল্প খাতে যারা সইটেকের আধুনিক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী চিপ ব্যবহার করছে তারা প্রভাবিত হচ্ছে না।’
২০২১ সালে ১১০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছিল সইটেক। এর অংশ হিসেবেই সিঙ্গাপুরের কারখানায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ফ্রান্সের বাইরে শুধু সিঙ্গাপুরেই সইটেকের চিপ উৎপাদন কারখানা রয়েছে। সরবরাহ চেইন থাকলেও এর উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি আরো বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। যদিও এ অঞ্চলে জমির দাম ও শ্রম ব্যয় অনেক বেশি। ফ্রান্সের আরেকটি সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন কোম্পানি ডলফিন ডিজাইনের ৮০ শতাংশ শেয়ার সইটেকের অধীনে। ডলফিনও এশিয়ায় তাদের প্রথম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেন্টার স্থাপনের কথা ভাবছে। মন্ট্রিলের পর বিদেশে এটি প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় ডিজাইন সেন্টার হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।