শাওমি ও একই মালিকানার অপর কোম্পানি ভিভো’র পর এবার বিশাল এক ইঞ্চি’র ক্যামেরা সেন্সর আনা সর্বশেষ স্মার্টফোন হিসেবে তালিকায় নাম লিখিয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা চীনা কোম্পানি অপো।
‘ফাইন্ড এক্স ৬’ নামের নতুন এই ডিভাইসে ‘টেলিফটো’ ও ‘আলট্রাওয়াইড ক্যামেরার’ সুবিধাও রয়েছে। আর ২১ মার্চ এটি প্রচলিত ‘ফাইন্ড এক্স৬’ ডিভাইসের সঙ্গে চীনে উন্মোচিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ।
চীনে নতুন এই ডিভাইসের ১২জিবি র্যাম ও ২৫৬ মেগাবাইট সংস্করণের দাম শুরু পাঁচ হাজার নয়শ ৯৯ ইউয়ান থেকে (প্রায় আটশ ৭২ ডলার)। আর ১৬জিবি র্যাম ও ৫১২ জিবি’র স্টোরেজ থাকা ডিভাইসের বেলায় এর দাম গিয়ে ঠেকেছে ছয় হাজার নয়শ ৯৯ ইউয়ানে (প্রায় এক হাজার ১৭ ডলার)।
এদিকে, প্রো সংস্করণের বাইরের ‘ফাইন্ড এক্স৬’ ডিভাইসের ১২জিবি র্যাম ও ২৫৬ মেগাবাইট সংস্করণের দাম শুরু চার হাজার চারশ ৯৯ ইউয়ান থেকে (প্রায় ছয়শ ৫৪ ডলার)। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিসরে ডিভাইসটি উন্মোচিত হবে কি না, ওই বিষয়টি ভার্জকে নিশ্চিত করতে রাজী হননি কোম্পানির এক মুখপাত্র।
তবে নতুন এই ডিভাইসের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এর প্রাথমিক ক্যামেরা, যেখানে সনি’র ৫০ মেগাপিক্সেলের এক ইঞ্চি’র ‘আইএমএক্স৯৮৯’ সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে। তবে অপো ব্যবহারকারীদের এই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায় যে তারা ফোনের টেলিফটো ও আলট্রাওয়াইড ক্যামেরার বিষয়টিও ভুলে যায়নি।
অপোর দাবি, ডিভাইসের আলট্রাওয়াইড ও পেরিস্কোপ ক্যামেরায় ব্যবহৃত ৫০ মেগাপিক্সেলের ‘১/১.৫৬ ইঞ্চির আইএমএক্স৮৯০’ সেন্সর এখন পর্যন্ত আসা ‘যে কোনো ওয়াইড অ্যাংগেল ক্যামেরার চেয়ে আকারে বড়’ ও এতে ‘বাজারে বিদ্যমান যে কোনো টেলিফটো ক্যামেরার চেয়ে বড় আকারের সেন্সর’ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, এই সেন্সরের আকার স্যামসাংয়ের সাম্প্রতিক ‘গ্যালাক্সি এস২৩’ ও ‘এস২৩ প্লাস’-এর মতোই বড়।
সেন্সরের আকারের বিবেচনায় এর ছবির মান অনেক পিছিয়ে, বিশেষ করে যখন বেশিরভাগ স্মার্টফোন নিজেদের আলোকচিত্র ব্যবস্থার সফটওয়্যারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। সেই লক্ষ্যে, ‘হ্যাসলব্ল্যাড’-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে কয়েকটি সফটওয়্যার ফিচার যৌথভাবে নিয়ে কাজ করেছে অপো। ফলে, ‘ফাইন্ড এক্স৬ প্রো’ ডিভাইসে একটি ‘পোর্ট্রেইট মোড’ যুক্ত হয়েছে, যা নকশা হয়েছে এই সুইডিশ ক্যামেরা উৎপাদকের ‘এক্সসিডি৩০’ ও ‘এক্সসিডি৮০’ লেন্স দুটি’র রঙ ও ‘ডেপথ অফ ফিল্ড’ অনুকরণের উদ্দেশ্যে।
ক্যামেরার বিভিন্ন খুঁটিনাটি সামগ্রিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে, ‘ফাইন্ড এক্স৬ প্রো’ ডিভাইসের আলট্রাওয়াইড ক্যামেরায় আছে একশ ১০ ডিগ্রির ‘ফিল্ড অফ ভিউ’, ‘এফ/২.২ অ্যাপারচার’ ও অন্তত চার সেন্টিমিটার দুরত্ব থেকে এটি ‘ম্যাক্রো-ধাঁচের’ বিভিন্ন ছবি তুলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।
অন্যদিকে, পেরিস্কোপ টেলিফটো ক্যামেরায় মিলবে তিনগুণ অপটিকাল জুম ও ছয়গুন হাইব্রিড জুমের সুবিধা।
ডিভাইসের পেছনে থাকা বিশাল বৃত্তাকার ক্যামেরা বাম্পের বাইরেও, অপোর বেশ ফ্ল্যাগশিপ সুবিধা আছে ফাইন্ড এক্স৬ প্রো ডিভাইসে। একে ক্ষমতা দেয় কোয়ালকমের দ্বিতীয় প্রজন্মের ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর ‘স্ন্যাপড্রাগন ৮’। আর এতে আছে পাঁচ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি, যা একশ ওয়াট গতিতে তার’সহ ও তারবিহীনভাবে ৫০ ওয়াট গতিতে চার্জ হয়।
আর এতে ব্যবহৃত হয়েছে ছয় দশমিক আট দুই ইঞ্চির একশ ২০ হার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন ওলেড ডিসপ্লে, যার সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা আড়াই হাজার নিট। অপোর দাবি, এটিই ‘সবচেয়ে উজ্জ্বল স্মার্টফোন স্ক্রিন’। আর ৩২ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরার জন্যেও আলাদা জায়গা আছে এতে। পানি ও ধুলা নিরোধী হওয়ায় এটি ‘আইপি৬৮’ রেটিং পেয়েছে।
ভার্জ বলছে, মঙ্গলবারের উন্মোচন কেবল চীনা বাজারের উদ্দেশ্যে। আপাতত ‘এক্স৬’ ও ‘এক্স৬ প্রো’ দুটো ডিভাইসের আন্তর্জাতিক উন্মোচনের ঘোষণা দেয়নি কোম্পানিটি। আর এটি অপোর ফাইন্ড এক্স৫ প্রো ডিভাইসের উন্মোচনের পুরো বিপরীত। কারণ সে সময়, এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপেও বিক্রি হয়েছিল এটি।