যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের দিক থেকে হুয়াওয়ে পিছিয়ে গেছে। বিশ্ববাজার থেকে স্মার্টফোন ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে চীনের এ কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও উপাদান ব্যবহার করতে না পারায় প্রতিযোগীদের তুলনায় হুয়াওয়ে চিপ, সার্ভার ও কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। এ সমস্যা সমাধানে নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত চিপ ও পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে হুয়াওয়ের ভাইস ও রোটেটিং চেয়ারম্যান জু ঝিজুন।
গিজমোচায়নায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ওয়ার্ল্ড কম্পিউটিং কনফারেন্স ২০২৩-এ জু হুয়াওয়ের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, হুয়াওয়ে যদি নিজস্ব চিপ ব্যবহার না করে তাহলে প্রতিযোগীদের সঙ্গে দূরত্ব আরো বাড়বে। অন্যদিকে চীনের এ প্রযুক্তি জায়ান্টটি যদি নিজস্ব চিপের ব্যবহার বাড়ায় তাহলে, কোম্পানির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও পণ্যের বিষয়ে আরো মানুষ জানতে পারবে। এর মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে।
জু ঝিজুন আরো বলেন, চীনের জেনারেল কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি তিনটি ইকোসিস্টেমে এগিয়ে যাচ্ছে। যার প্রথমটি হচ্ছে এক্স ৮৬, দ্বিতীয়টি হচ্ছে পেন্টিয়াম ইকোসিস্টেম এবং তৃতীয়টি হচ্ছে আরআইএসসি-ভি ওপেন সোর্স ইকোসিস্টেম। তার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এ তিনটি ইকোসিস্টেম সমান্তরালভাবে অগ্রসর হবে। তবে এগুলোর মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকর বা সফল হবে সে বিষয়ে এখনই সেভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
পারতপক্ষে জু ঝিজুন চীনে ইনডিপেনডেন্ট কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি ইকোসিস্টেম তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নে এটি প্রয়োজন। আর বর্তমানে চিপ উৎপাদনে যে প্রযুক্তি বিদ্যমান সেটির পরিপ্রেক্ষিতেই কম্পিউটিং পাওয়ার অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে চীনের বাজারে ফাইভজি নেটওয়ার্কযুক্ত মেট ৬০ স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে। আর এটি পশ্চিমা দেশসহ বিশ্ববাজারে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এ ডিভাইসটিতে ৭ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি কিরিন চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রযুক্তি বর্তমান হিসেবে পুরনো হলেও ফাইভজির বাজারে ফিরে আসার মাধ্যমে হুয়াওয়ে নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে।
প্রযুক্তি বাজারে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর তুলনায় কিরিন চিপসেট সেভাবে উন্নত না হলেও এ খাতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি হুয়াওয়ের প্রথম ধাপ। প্রযুক্তিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যেকোনো জায়গা থেকেই কোম্পানিটিকে কাজ শুরু করতে হবে। সেদিক থেকে নিজস্ব চিপ উৎপাদন ও ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত তা অদূর-ভবিষ্যতে কোম্পানিটিকে সেমিকন্ডাক্টর খাতে এগিয়ে থাকার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
স্মার্টফোনের বাজারে হুয়াওয়ের মেট ৬০ সিরিজ নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে ডিভাইসে যেসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর সরবরাহকারী কারা।
টেকটাইমসে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, মেট ৬০ সিরিজে দক্ষিণ কোরিয়ার চিপ নির্মাতা কোম্পানি এসকে হাইনিক্সের মেমোরি ব্যবহারের বিষয়টি নির্দেশ করে যে কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গেছে এটি। তবে আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতির মাধ্যমে হুয়াওয়েকে মেমোরি সরবরাহ করার বিষয়টি নাকচ করেছে হাইনিক্স।
গত সপ্তাহে মেট ৬০ টিয়ারডাউনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে এসকে হাইনিক্সের মেমোরি চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র বেশকিছু দিক থেকে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি রফতানি বন্ধ করার মতো বিষয় রয়েছে। ফলে স্মার্টফোন তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা হুয়াওয়ের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
মেট ৬০ প্রোতে হাইনিক্সের চিপ ব্যবহার বলে দিচ্ছে, হুয়াওয়ে কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পেরেছে। আর এটি ওয়াশিংটনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য সরবরাহ করা হয় না।
সেলফোনের পাশাপাশি হুয়াওয়ে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমের বাজার বিকাশেও কাজ করছে। সম্প্রতি কাস্টম ওএসের চতুর্থ ভার্সন উন্মোচন করে হুয়াওয়ে। এর পরের এক মাসে এক কোটির বেশি ডিভাইসে হারমনি ওএস৪ ইনস্টল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।