ভারতের বাজারে গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে দেশটির বিভিন্ন অংশে এ নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যবহার বাড়াতে হলে সাশ্রয়ী মূল্যে অ্যান্ড্রয়েড সেলফোন ও উদ্ভাবনী ব্যবহার ক্ষেত্র প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিশারদরা। খবর ইটটেলিকম।
শাওমি, রিয়েলমি, পকো, লাভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি এরই মধ্যে বেশকিছু ফাইভজি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। যেগুলোর মূল্য ১০ হাজার রুপির আশপাশে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই ফাইভজি প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। বিশ্লেষকদের মতে, ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্রয় সক্ষমতা, ডিভাইসের প্রাপ্যতা ও সেগুলোতে প্রবেশাধিকারের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক জরুরি।
সাইবার মিডিয়া রিসার্চের (সিএমআর) প্রভু রাম জানান, ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারে স্মার্টফোন কেনার সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। এর অংশ হিসেবে ১০ হাজার রুপির মধ্যে আরো ফাইভজি ডিভাইস আনতে হবে। তবে দ্রুতগতির ও উন্নত এ নেটওয়ার্কের ব্যবহার নিশ্চিতে নতুন ক্ষেত্রও তৈরি করতে হবে। এর মাধ্যমে ফাইভজির পরিপূর্ণ উপকারিতা ও সুবিধা পাওয়া যাবে।
সিএমআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে দেশটিতে ফাইভজি ডিভাইসের গড় বিক্রি মূল্য (এএসপি) কমে ৪২৮ ডলারে এসেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে মূল্য ৪৮৭ ডলার ছিল। মূলত ফাইভজি পরিষেবার বিস্তৃতি ও সাশ্রয়ী মূল্যের ডিভাইসের সরবরাহ থাকায় গড় বিক্রি মূল্য কমেছে।
কোয়ালকম ও মিডিয়াটেক সাশ্রয়ী মূল্যে ফাইভজি চিপসেট সরবরাহ করায় সেলফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ফাইভজি ডিভাইস বাজারে আনতে পারছে। প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকদের মতে, সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের স্মার্টফোন সরবরাহ করা গেলে বিক্রিও বাড়বে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের শুরুতে প্রযুক্তি বাজারে যে দুর্বল পরিস্থিতি ছিল তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেক আর্কের তথ্যানুযায়ী, এর মাধ্যমে চলতি বছর শেষে ১৪ কোটি ফাইভজি ডিভাইস বিক্রি করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতী এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপল ভিত্তাল বলেন, ‘বর্তমানে ফাইভজি নিয়ে যে সমস্যা সেটি হলো কোনো অ্যাপলিকেশন নেই। এমনকি বৈশ্বিকভাবেও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের কোনো ক্ষেত্র নেই। ফাইভজি এখন শুধু গতির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বজুড়ে রিমোট সার্জারি, চালকবিহীন গাড়ির কথা বলা হলেও বাস্তবে সেভাবে কিছুই কার্যকর হয়নি। সবই হবে তবে সময় লাগবে।’
স্মার্টফোন উৎপাদনকারীরা বর্তমানে আরো সাশ্রয়ী মূল্যে ফাইভজি নেটওয়ার্কযুক্ত সেলফোন বাজারজাতে কাজ করছে। বাজারসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, আগামী বছর ১০-২৫ হাজার রুপির মধ্যে আরো বেশকিছু ফাইভজি হ্যান্ডসেট প্রযুক্তি বাজারে প্রবেশ করবে এবং সামগ্রিকভাবে সেলফোনের বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করবে।
ভারতে মোট ১০০ কোটির বেশি সেলফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ২০-২৫ কোটি এখনো ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে। যে কারণে টেলিকম অপারেটরগুলো এসব ব্যবহারকারীর ফোরজি বা ফাইভজিতে স্থানান্তর করার মাধ্যমে গড় আয় বাড়াতে চাইছে। আর এদিক থেকে ফাইভজি ডিভাইসের সহজলভ্যতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তিবিশারদরা।