বাংলাদেশের একজন আলোচিত তরুন উদ্যোক্তা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। চট্টগ্রামের এই কৃতী ব্যবসায়ী বিভিন্ন খাতে অবদান রাখার সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন তথ্য প্রযুক্তি খাতে। বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবায় বিপ্লব আনা নগদের সাফল্যমন্ডিত যাত্রার সঙ্গী তিনি।
সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতের সংগঠন বেসিসের নির্বাচনের আগে এলিট কথা বলেছেন বাংলাদেশের তরুন আইসিটি উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে। এই একান্ত সাক্ষাতকারে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেছেন নগদ ডিজিটাল ব্যাংক আইসিটি উদ্যোক্তাদের বড় একটা স্বাধীনতা দেবে।
টেকজুম: আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: বাংলাদেশের সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট খাত আমাদের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটা। একজন তরুন তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে আমি দেখেছি আমাদের এই খাতে অনেকরকমের নীতিগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। ট্যক্স হলিডে অব্যহত রাখা, উদ্যোক্তাদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করার মত অনেক পলিসি লেভেলের ব্যাপার নিয়ে কাজ করার কথা ছিলো বেসিসের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সেটা হয়নি। সে জন্যই আমার মনে হয়েছে, গত এক যুগে এই খাতে এবং তরুন ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেওয়ায় আমার যে অভিজ্ঞতা, সেটা বেসিসে কাজে লাগানো দরকার।
টেকজুম: বর্তমানে দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থা কেমন?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: যতটা ভালো হওয়ার কথা ছিলো, তা হয়নি। এটা ঠিক যে, আমাদের সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগের কোনো অভাব নেই। তারা অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। সেই সাথে আমাদের আছে বিশাল এক তরুন জনগোষ্ঠী, যাদের পক্ষে সফটওয়ার শিল্পে অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু নীতিগত স্তরে কাজ করার দুর্বলতার কারণে এই খাতকে আমরা স্বয়ং সম্পূর্ন করতে পারিনি।
টেকজুম: বিদেশে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে কি ধরনের কাজ করতে চান?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীন বাজারের চাহিদা মেটানো। আমাদের যেন আইসিটিতে একটি পন্যও আমদানি করতে না হয়। সেই সাথে আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে একটা অবস্থান তৈরি করতে হবে। সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট সেবা রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এই ধরণের সেবায় বিক্রোয়ত্তর সেবা যে যত দিতে পারে, তার দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ তত বেশি থাকে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের আইসিটি পন্যের এরকম একটা ব্র্যান্ডিং করতে চাই যে, এখানে সেরা সেবাটা পাওয়া যায়।
টেকজুম: নির্বাচনে জয়ী হলে বেসিসের কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আনতে চান?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: দেখুন, বেসিস আসলে নিজেকে একটা মধ্যস্থতাকারী সংস্থা হিসেবে দাড় করাতে পারে। বিভিন্ন রেগুলেটরি বডির সাথে আলাপ করে উদ্যোক্তাদের জন্য নানা সুবিধা বের করে আনাটা প্রধাণ কাজ হওয়া উচিত। সরকারের নীতি নির্ধারণে প্রভাব রাখা উচিত। এগুলো বেসিস সঠিক ভাবে করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। আর এটাতেই আমি সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চাই।
টেকজুম: ভোটারদের প্রতি আপনার মেসেজ কি থাকবে?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: ভোটারদের আমি বলবো, নাম ও প্রচারণাকে গুরুত্ব না দিয়ে সত্যিকারের উদ্যোক্তার জন্য কে কাজ করবে, সেটা বিবেচনা করা। বেসিস সদস্যদের বড় একটা গুন হলো, তারা সমাজের সবচেয়ে চিন্তাশীল অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ফলে তাদেরকে আমার বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এই সম্মানিত সদস্যরা নিজেরই বুঝবেন, নেতৃত্বগুন সম্পন্ন কেন লোকেদের তাদের প্রয়োজন।
টেকজুম: একটি স্মার্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ তৈরিতে আপনার ব্যক্তিগত ভূমিকা কী কী থাকবে?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি। ফলে আমাদের প্রতিটি সেক্টরকে এখন স্মার্ট হয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মান নির্ভর করবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ওপর। সেখানেই আমাদেরকে সবচেয়ে স্মার্ট নেতৃত্ব গঠন করতে হবে। আমি নিজে জুনিয়র চেম্বার বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছি লম্বা সময় ধরে, দেশের শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নগদের শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ফলে স্মার্ট নেতৃত্ব তৈরিতে আমি ভূমিকা রাখতে পারবো বলেই মনে করি।
টেকজুম: দেশীয় বাজারে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এখনও বিদেশি সফটওয়্যারের আধিপত্য-এই বিষয়টি দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট: এটা ভালো পরিস্থিতি নয়। দেশের বাজারে দেশী সফটওয়ারেরই আধিপত্য থাকা উচিত। কারণ, এর সাথে নিরাপত্তার বিষয়ও জড়িত। আমি নগদের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বলতে পারি, আমরা শুরু থেকে দেশী সফটওয়ার ও দেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করছি। এটাই আমাদের সার্বিক চিত্র হওয়া উচিত।