একসময় গেমিং মানেই ছিল স্মার্টফোনের প্রতি বাড়তি একটি চাপ। গেমিং এর ফলে প্রায়ই ফোনের ব্যাটারি, কাজের ক্ষমতা কিংবা অন্যান্য অংশে ব্যাপক সমস্যা ছিল নিত্য ঘটনা। কিন্তু হালের বিভিন্ন স্মার্টফোনে শক্তিশালী প্রসেসর সেইসাথে দারুণ সব মোবাইল চিপের কল্যাণে বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনগুলো হয়ে উঠছে আরো বেশি গেমিং উপযোগী। এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত গ্রাফিক্স এবং গেমপ্লে এর উপর ভিত্তি করে বাজারে আনছে নতুন ডিজাইনের সব স্মার্টফোন। শুধু তাই নয় বর্তমানের বিভিন্ন গেমিং মোবাইল গেম ভিত্তিক অন্য যেকোন ডিভাইস যেমন প্লেস্টেশন, এক্সবক্স, নিনটেন্ডো সুইচ কিংবা কম্পিউটারের সাথেও পাল্লা দেবার সক্ষমতা রাখে।
বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রাহকদের কাছে নতুন স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে গেমিং একটি মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি স্মার্টফোনের একটি আলাদা ধারাই এখন চালু হয়েছে কেবলমাত্র গেমারদের কথা মাথায় রেখে।
গেমিং ফোনে যা কিছু যাচাই করা দরকার
স্পেস
গেমিং করুন বা না করুন আপনার ফোনের হার্ডওয়্যার স্পেস অবশ্যই আপনার ফোনের ভালো-মন্দ যাচাই করবে। আপনি ফোন কিনতে গেলে অবশ্যই এটি মাথায় রাখবেন। শক্তিশালী প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স চিপ, হাই কোয়ালিটি ডিসপ্লে আর বড় ব্যাটারি আপনার গেমিং ফোনের জন্য আবশ্যক বিষয়। এছাড়া ফোনের বডি বিল্ডআপ থেকেই দেখে নিন এর স্টেরিও স্পিকারের মান কেমন। গেমিং এর জন্য ভালো মানের অডিও সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি গেমারকে গেমিং পরিবেশ এর সাথে মানিয়ে নিতে ব্যাপক সাহায্য করে।
ডিজাইন
গেমিং এর সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলেন আপনার ফোনের চার্জ পড়তির দিকে- সেক্ষেত্রে ওয়্যারলেস চার্জিং আপনার জন্য খুবই ভাল একটি দিক। এছাড়া বড় স্ক্রিনের ফোন আপনার প্রয়োজন হবে গেমের গ্রাফিক্স সঠিকভাবে ফোনে চালনা করার জন্য। ফোনের ডিজাইন এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেয়া দরকার, যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লম্বা সময়ের গেমিং ফোনে চাপ সৃষ্টি করে যার কারণে ফোনের স্বাভাবিক কাজের গতি কমে আসতে পারে। তাই ফোনের চাপ নেবার ক্ষমতা কেমন সেটি আগে থেকে জেনে নেয়া উচিত।
গেমিং এর জন্য সেরা ৬ স্মার্টফোন
১। অ্যাপল আইফোন এক্সআর
দারুণ শক্তিশালী অ্যাপল এ১২ বায়োনিক চিপ আর দুর্দান্ত ব্যাটারি নিয়ে সেরা গেমিং ফোনের একটি অবশ্যই অ্যাপলের আইফোন এক্সআর। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই স্মার্টফোন ব্র্যান্ড নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। এর ওয়্যারলেস চার্জিং ফোনটিকে যেকোন গেম প্রিয় মানুষের জন্য একেবারেই আদর্শ করে তুলেছে। পাবজি কিংবা ফোর্টনাইট এর মত দারুণ কিছু গেমিং এর জন্য আইফোন এক্সআর আপনাকে দিচ্ছে ৬.১ ইঞ্চির লিকুইড রেটিনা এলসিডি ডিসপ্লে।
আইফোনের অন্যান্য বাজারদরের তুলনায় এক্সআর থাকছে অনেকটাই হাতের নাগালে। আর প্লে স্টোরের মতই এখানেও আপনি একেবারেই সাজানো অবস্থায় পাচ্ছেন দারুণ সব গেইম। সত্য বলতে আইফোন এক্সআর সাধারণ যে কোনো স্মার্টফোনের তুলনায় বেশ উন্নত একটি ডিভাইস। এর কোয়ালিটি একে সমসাময়িক যে কোনো ফোন থেকেই বেশ অনেকটা এগিয়ে রাখবে। এর আকর্ষণীয় ডিজাইন, ওয়াটারপ্রুফ বডি এবং অন্যান্য সামগ্রী একে স্মার্টফোন এবং গেমিং দুইক্ষেত্রেই অনন্য করে তুলেছে।
২। স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট নাইন
স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট নাইন আপনার জন্য সেরা স্মার্টফোনই না বরং এটি হতে পারে সেরা একটি গেমিং ডিভাইস। বর্তমান সময়ে গুগল মোবাইল প্লাটফর্মে এটি গেমিং এর জন্য সেরা একটি ফোন। হার্ডওয়্যার এর দিক থেকে বিবেচনা করা হলে, এরচেয়ে ভালো কোনো কিছু আপনি গেমিং এর জন্য আশা করতে পারেন না। শক্তিশালী মোবাইল চিপ, সুপার এমোলেড স্ক্রিন এর সাথে সময়ের সেরা কোয়ালিটি বিল্ডআপ, ব্যাপক র্যাম ও ইন্টারনাল স্টোরেজ সেই সাথে দারুণ স্পিকার সবই পাচ্ছেন নোট নাইনে।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটের এই ফোনের স্ক্রিন ৬.৪ ইঞ্চি। ইনফিনিটি এমোলেড ডিসপ্লে হবার কারণে এতে গেমিং এর অভিজ্ঞতা অ্যাপল থেকেও কিছুক্ষেত্রে বেশি উপভোগ্য। নোট নাইনের ৪০০০ মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি তারসহ কিংবা তারবিহীন যেকোন অবস্থাতেই খুব দ্রুত চার্জ হতে পারে। একইসাথে ফোনটি ওয়াটার রেসিস্ট্যান্ট হবার কারণে গ্রাহক পছন্দের গ্রাফে বেশ উপরের দিকেই থাকছে।
৩। সনি এক্সপেরিয়া এক্সএ টু আলট্রা
মোবাইল গেমিং এর অন্যান্য যেকোন ফোন বিবেচনায় সনি এক্সপেরিয়া এক্সএ টু আলট্রা খানিক কম বাজেটেই আপনি পেয়ে যাবেন। গ্যালাক্সি নোট নাইনের প্রায় ৭০০ ডলারের বিপরীতে এর দাম অনেকখানি কমে ৩০০ ডলারে। মাঝারিমানের কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৩০ চিপসেটের এই ফোনের স্ক্রিন প্রায় ৬ ইঞ্চি। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় প্রায় সব গেম এই ফোনে বেশ ভালভাবেই কাজ করে।
শুধুমাত্র একটি স্পিকার থাকলেও সনি এক্সপেরিয়া এক্সএ টু আলট্রার অডিও কোয়ালিটি আপনাকে গেমের ভিতরের সবটুকু স্বাদ দিতে সক্ষম। এর শক্তিশালী বেস গেমারকে অন্যরকম অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করাবে। আর দামের কথা বিবেচনায় এর ৩৫৮০ মাইক্র অ্যাম্পিয়ার সক্ষমতার ব্যাটারিও বেশ সন্তোষজনক। স্মার্টফোনের হিসেবে সনি এক্সপেরিয়ার এই সেটে থাকছে ২৩ মেগাপিক্সেলের ব্যাক ক্যামেরা এবং ১৬ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল সেলফি ক্যামেরা। সেই সাথে ওয়্যারলেস চার্জিং এবং এলসিডি ডিসপ্লে সনির এই সেটকে বিগত বছরের সেরা ফোনের তালিকায় রেখেছিলো।
৪। আইফোন এক্সএস এবং আইফোন এক্সএস ম্যাক্স
তালিকার চারে আবারো অ্যাপলের আইফোন ঠাঁই করে নিয়েছে। আগের এক্সআর এর মতোই এতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপলের নিজস্ব বায়োনিক এ১২ চিপ। তবে এই ফোনের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এর বাজারমূল্য। আপনার যদি বাজেট নিয়ে বড় কোনো শঙ্কা না থাকে তবে আইফোন এক্সএস বা এক্সএস ম্যাক্স নিশ্চিন্তে আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন।
আইফোনের এই বড় সংস্করণ বর্তমান সময়ের সব ধরনের গেমসের ব্যাপক পরিমাণ চাপ নিতে সক্ষম। ৬.৫ ইঞ্চির সুপার রেটিনা ওএলইডি ডিসপ্লে গেমিং এর সময় গেমারকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য দিতে সক্ষম। ৬৪, ২৫৬ এবং ৫১২ জিবি আলাদা আলাদা স্টোরেজ ক্ষমতা সম্পন্ন এই স্মার্টফোনের রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের দুইটি ক্যামেরা এবং ৭ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। ওয়াটারপ্রুফ বডি, বিশাল ক্ষমতার ব্যাটারি সব মিলিয়ে দারুণ এই সেটের মূল্য ১০৮৯ ডলার।
৫। আসুস আরওজি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন
ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের জগতে আসুস বেশ নামী হলেও স্মার্টফোনের বাজারে খানিক পিছিয়ে থাকবে এটি। যদিও গেমিং ফোনের বিবেচনায় নিজেদের নাম ঠিকই অক্ষুণ্ণ রেখেছে কোম্পানিটি। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেট, ৬ ইঞ্চি এমোলেড ডিসপ্লে যার রিফ্রেশ রেট ৯০ হার্জ এবং রেসপন্স টাইম ১ মিলি সেকেন্ড এবং ৪০০০ মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি সবই থাকছে আদর্শ গেমিং ফোনের গুণাগুণ হিসেবে।
নিজেদের কম্পিউটার গেমিং ডিভাইসের অভিজ্ঞতা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বেশ ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছে আসুস। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী ফোনের চেয়ে আসুসের ব্যতিক্রমী দিক এর কাস্টমাইজেশন ক্ষমতা, অর্থাৎ গেমার চাইলেই আসুসের এই স্মার্টফোনকে নিজের মত করে পরিবর্তন করে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গেমিং চালিয়ে যেতে পারবেন। আসুসের এই ফোনে আপনি বাড়তি কিছু উপাদান পাবেন কেবলমাত্র গেমিং এর জন্যে। বাড়তি কন্ট্রোলের জন্য গেইমভাইস দক, বাড়তি ডিসপ্লে হিসেবে টুইনভিউ ডক এবং আদর্শ গেমিং এর জন্য মোবাইল ডেস্কটপ ডক। তবে সব মিলিয়ে দারুণ হলেও দামের বিবেচনায় খানিক পিছিয়ে যাবে আসুস আরওজি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন।
৬। রেজার ফোন ২ এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন
রিফ্রেশ রেট গেমিং এর জন্য সবসসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি গেমারকে ডিসপ্লেতে ভাল গ্রাফিক্সের গেমের ব্যাপারে সাহায্য করে। আর সেই দিক বিবেচনায় বাকি সব সেট থেকে এগিয়ে থাকবে রেজার ফোন ২ এন্ড্রয়েড। স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটের এই ফোনের স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট ১২০০ হার্জ যা অনেক কম্পিউটারেও বিরল। এছাড়া রেসপন্স টাইম মাত্র ১ মিলিসেকেন্ড।
৮ জিবি র্যামের এই ফোনের ব্যাটারি প্রায় ৪০০০ মাইক্রো অ্যাম্পিয়ার। সেই সাথে অসাধারণ স্টেরিও স্পিকার গেমিং এর ক্ষেত্রে আলাদা সন্তুষ্টি দিবে এর গ্রাহককে। ৫.৭ ইঞ্চির কিউএইচডি ডিসপ্লের কারণে তালিকার অন্যান্য স্মার্টফোন থেকে অল্প পিছিয়ে থাকলেও গেমিং বিবেচনায় নিজেদের ল্যাপটপের মত স্মার্টফোনেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে রেজার কোম্পানি।
তথ্যসূত্র: বেস্ট প্রোডাক্টস ডট কম