শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী কোনো শিশু বিছানায় প্রস্রাব করলে তা জানান দেবে অ্যালার্ম। অবাক করার মতোই বিষয়টি। এমন একটি বিছানা (বেড) উদ্ভাবন করেছেন বগুড়ার ছেলে মাহমুদুন নবী বিপ্লব। একই সাথে তিনি স্যালাইন অ্রালার্ম সিস্টেম উদ্ভাবন করেছেন। স্যালাইন শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সিস্টেমটি সেন্সরের মাধ্যমে ডিউটিরত নার্স ও রোগীর স্বজনদের সতর্কতা বার্তা জানাবে।
বিপ্লব পেশায় একজন যন্ত্র প্রকৌশলী। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক এই শিক্ষার্থী এর আগে ইন্টেলিজেন্ট ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম এবং বন্যা সতর্কীকরণ যন্ত্র উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার এই উদ্ভাবন সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) বিভাগে উপস্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয় তাকে।
জরুরি সতর্কতা বিছানাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’। আড়াই বছর আগে নিজের সন্তান জন্মের পর পরই এমন একটি বিছানা তৈরির কল্পনা তিনি অনুভব করেন। বিপ্লব জানান, আমার সন্তান বিছানায় প্রস্রাব করে ৩-৪ ঘণ্টা ওই প্রস্রাবের মধ্যেই থাকত। ভেজা বিছানায় থেকে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। তখনই ভাবি, ছোট শিশুরা তো কথা বলতে জানে না। প্রস্রাব করে অনেক সময় কান্নাও করে না। তাই তাদের জন্য এমন একটি বিছানা যদি করা যায়, যে বিছানায় শিশু প্রস্রাব করার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তখন তাৎক্ষণিক মা বা পরিবারের অন্য কেউ এসে শিশুর বিছানাটি বদলে দিতে পারবেন। এরপর প্রায় দুই বছর গবেষণা করে ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’টি তিনি তৈরি করেন।
এই বেড তৈরি করতে তিনি ব্যবহার করেছেন চায়নার এক ধরনের সেলুলয়েডের সুতা ও ওয়াটার প্রুফ কাপড়। দুটি উপাদানই তিনি চায়না থেকে এনেছেন। ১টি বেড তৈরি করতে খরচ পড়েছে সাড়ে ১৩ শ টাকা। তিনি বিক্রি করছেন ১৫ শ টাকায়। সাধারণ রাবার ক্লথ এর মতো দেখতে হলেও এই বেডে রয়েছে সেলুলয়েডের সুতা দিয়ে তৈরি নকশা করা সার্কিট। যেটা শরীরের কোনো ক্ষতি করবে না, আবার প্রস্রাবকে কিংবা পানিকে চিনতে পারবে। এই বিছানায় রয়েছে একটি কন্ট্রোল সার্কিট ও একটি অয়্যারলেস কলিং বেল। বিছানায় বাচ্চা প্রস্রাব করলে সিস্টেমটি একটি সিগনাল থ্রো করবে কলিং বেলে। সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেলটি সিগনালের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেবে যে বাচ্চা প্রস্রাব করেছে। এর মধ্যে বিপ্লবের তৈরি ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’ বগুড়া শহরের বড় বড় মেগাশপগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।
একই সাথে আরো একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন বিপ্লব। সেটি হলো স্যালাইন অ্যালার্ম। এটি একটি ডিজিটাল সিস্টেম যা রোগীকে স্যালাইন দেওয়ার পর যখন স্যালাইন শেষ হবে তার পূর্ব মুহূর্তে সেন্সরের মাধ্যমে ডিউটিরত নার্সকে অবহিত করবে যে আপনার রোগীর স্যালাইন শেষ হয়েছে। একটি ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক কেবিন বা ওয়ার্ড থাকে। প্রতিটি কেবিন বা ওয়ার্ডের সিরিয়াল নম্বর থাকে এবং ওই ক্লিনিক বা হাসপাতালে নার্স থাকে রোগীর সর্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য।
কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে বিপ্লব জানান, মনে করুন হাসপাতালে ১০টি কেবিন এবং ১টি ওয়ার্ড আছে। ওয়ার্ডে ১০টি বেড আছে। সর্বমোট বেড হলো ২০টি। কিন্তু সেখানে নার্স আছে চারজন। ২০টি বেডের জন্য চারজন নার্সের পক্ষে অনেক সময় সব রোগীর খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই দেখা যায় রোগীর স্যালাইন শেষ হওয়ার পর রক্ত স্যালাইনের মধ্যে উঠে যায়। এই অবস্থা হইতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমার আবিষ্কার স্যলাইন অ্যালার্ম।
দেখা গেছে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটি ডিউটি রুম থাকে যেখানে নার্সরা অবস্থান করে। এই ডিভাইসটি ২টি অংশে বিভক্ত। এর একটি হলো সেন্সর ও অপরটি হলো কলিং বেল। তাই ২০টি বেডের জন্য ২০টি সেন্সর থাকবে প্রতিটি স্যালাইনের সঙ্গে। সেই সাথে ২০ কলিং বেল থাকবে নার্স ডিউটি রুমে। বেডের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী যে বেডের রোগীর স্যালাইন শেষ হবে সঙ্গে সঙ্গে সেই বেডের বেলটি (ডিউটি রুমে অবস্থিত) বেজে উঠবে। তখন সঙ্গে সঙ্গে ডিউটিরত নার্স গিয়ে স্যালাইনটি রোগীর শরীর হতে খুলে দেবে। ফলে রোগী বিপদ হতে রক্ষা পাবে।
যন্ত্র প্রকৌশলী বিপ্লব বলেন স্যালাইন অ্যালার্ম হলো একটি ডিজিটাল সিস্টেম। স্যালাইন শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সিস্টেমটি সেন্সরের মাধ্যমে ডিউটিরত নার্স ও রোগীর স্বজনদের জানাবে। এটি করতে প্রতিটি স্যালাইনের সঙ্গে একটি করে সেন্সর লাগাতে হবে। সব মিলিয়ে এই ডিভাইজের দাম প্রতিটি ৬ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে হবে। পরিমাণে বেশি তৈরি করলে খরচ আরো কমে যাবে।