নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে দেশে দেশে আর্থিক সংকট তীব্র হচ্ছে। ভাইরাস মোকাবেলায় অর্থ ঢালতে গিয়ে অনেক দেশের সরকারি তহবিল তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। এ অবস্থায় বর্তমান সময় ও ভাইরাসপরবর্তী আয় বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠবেন সরকারপ্রধানরা। যার অংশ হিসেবে আয়ের নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি বিরাজমান খাতে বাড়তে পারে কর আরোপ। এমন পথেই হাঁটছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। আগামী জুলাই থেকে দেশটিতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় আরোপ করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। ডিজিটাল পণ্য ও সেবা বিক্রিতে সরকারকে এ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির বাজারে বিদ্যমান অনাবাসিক ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। স্ট্রিমিং সার্ভিস, অ্যাপ্লিকেশন ও ডিজিটাল গেমের মতো সেবা এ করের আওতাভুক্ত থাকবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি এর আগে জানিয়েছিল, স্পটিফাই ও নেটফ্লিক্সের মতো স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন এ করের আওতায় আসবে। যদিও এ বিষয়ে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এতদিন ধরে ইন্দোনেশিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করা ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে আসছিল। নভেল করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় গত মার্চেই দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো জরুরিভিত্তিতে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভ্যাট আরোপের ঘোষণা দেন। আর গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত আইনটি পাস হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারীর ফলে ঘরবন্দি থাকা মানুষেরা এখন খুব বেশি ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠেছে। এতে করে অন্যান্য খাতে যখন আয় নিম্নমুখী, তখন এসব প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয়ে বেশ উল্লম্ফন হয়েছে। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি টেনে তুলতে মরিয়া সরকারগুলোর নজর পড়েছে এ খাতের ওপর। যে কারণে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষগুলোও এখন এ খাতের ওপর করারোপ বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে।
উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ (ওইসিডি) প্রায় ১৪০টি দেশ অ্যামাজন, ফেসবুক, অ্যাপল, গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আরো বেশি আয় বাড়ানোর জন্য নতুন করে ট্যাক্স আইন করার বিষয়ে ভাবছে। এর মধ্যে ফ্রান্স এরই মধ্যে ডিজিটাল ট্যাক্স লেভি আরোপের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ভঙ্গুর হয়ে পড়া অর্থনীতি টেনে তুলতে বেশির ভাগ দেশই এখন আয় বাড়াতে মরিয়া। মহামারীপরবর্তী অর্থনীতির চাকা আবার সচল করতে এখন আয় বাড়ানো ছাড়া এসব দেশের কোনো বিকল্প নেই। যে কারণে চলতি বছর অবনমনে পড়া অর্থনীতির দেশগুলো নগদ অর্থের খাত খুঁজতে থাকবে।
সার্চ জায়ান্ট গুগলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে ডিজিটাল অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা ভাবে রয়েছে। ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের আকার দাঁড়াতে পারে ১৩ হাজার কোটি ডলারে।
ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী শ্রী মুল্যানি ইন্দ্রাবতী বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের ভোগের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক পরিষেবা ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সরকার এখন এ খাত থেকে আয় বাড়ানো নিশ্চিত করতে চায়। তিনি মনে করেন, ভোক্তারা এখন সরাসরি গিয়ে পণ্য কেনার চেয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
চলমান মহামারীতে ইন্দোনেশিয়া সরকারের আয় ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ, যা বছরে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।