সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুট করেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘টিকটক’ নামের মিউজিক্যাল অ্যাপটি। তবে এই অ্যাপের মাধ্যমে সমাজে কুপ্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। অশ্লীলতার দায়ে ভারত পাকিস্থানসহ বিশ্বের বেশকিছূ দেশ ‘টিকটক’ অ্যাপের ডাউনলোড বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দেশটিতে গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ আর ডাউনলোড করা যাবে না ।
সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের হেডকোয়ার্টার চীনের বেইজিংয়ে হলেও সেখানকার নাগরিকরা টিকটক ব্যবহার করতে পারেন না। চীন থেকে টিকটক অ্যাপটি ইন্সটল এবং অপারেটও করা যায় না।
সম্প্রতি এক রিপোর্ট দেশে আপত্তিকর ভিডিও আপলোডের শীর্ষে বাইটড্যান্স মালিকানাধীন শর্ট ভিডিও তৈরির প্ল্যাটফরম টিকটক । বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে টিকটক বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ আপত্তিকর ভিডিও সরিয়েছে। দেশে যেকোন সামাজিক প্লাটফোমে মাত্র তিন মাসে ৫০ লাখ আপত্তিকর ভিডিও আপলোডের ঘটনা কে দেশের তরুণ সমাজের জন্য অশনিসঙ্কেত।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক ‘কমিউনিটি গাইডলাইন এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভিডিও সরানো হয়েছে ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৮টি।
স্কুলপড়ূয়া কিশোরী বা তরুণীরা ওদের টার্গেট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে এমন কয়েকজনকে বেছে নেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথোপকথনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরপর টিকটক ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে তাদের তারকা বানানোর প্রলোভন দেখানো হয়। এই ফাঁদে সহজেই পা দেন কিশোরী-তরুণীরা। তখন শুটিংয়ের নামে ডেকে তাদের ধর্ষণ করা হয়। সেই ঘটনার ভিডিও ও ছবি তুলে রাখা হয়। শেষ ধাপে সেই ভিডিও বা ছবি ইন্টারনেটে ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এমন ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে টিকটকতে ভিডিও শেয়ার করে পরিচিতি পাওয়া কিছু তরুণ। সম্প্রতি এমন একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। তাদের ফোনে পাওয়া যায় অর্ধশত কিশোরী-তরুণীর আপত্তিকর ছবি, যারা সবাই এই চক্রের শিকার বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী পাচার করার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল বাংলাদেশের পুলিশ। দেহ ব্যবসার জন্য এই মহিলাদের পাচার করার জন্য তাদের সামনে টোপ ফেলা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া ‘টিকটক’। নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত ১১ জনকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টিকটক বন্ধের আলোচনা চলছে জানিয়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান।
বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, টিকটক ব্যবহারের কারণে হাজারো তরুণ-তরুণী বিপথগামী হচ্ছে, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে, পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে, খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে দিনরাত ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। অতিসম্প্রতি সিএনএন এ বিষয়ে সতর্কতামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফেনীর ফুলগাজীতে টিকটক ভিডিও ধারণের সময় গলায় ফাঁস লেগে পল্লব দেবনাথ (১৮) নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ছেলেমেয়েরা টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের বানানো ভিডিওর বিষয়বস্তু কখনো কখনো অবাস্তব, অসামাজিক, ঝুঁকিপূর্ণও। এ গ্যাংগুলো বিভিন্ন সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে-এমন ঘটনারও খবরব পাওয়া যায়। তথাকথিত এ টিকটকারদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখা যায় বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও। তারা পরিবেশ নষ্ট করছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সুস্থ-সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ।