সমাজে হুট করে এক ট্রেন্ড চলে আসে। প্রথমে সেটা সভ্য সমাজই আবিস্কার ও ব্যবহার করে। কিন্তু ট্রেন্ডটার বারোটা বাজাতে অসভ্য সমাজের আগমন হতে খুব বেশি সময় লাগে না। যেমনটা হয়েছে এই টিকটকের বেলাতেও। নাটক, সিনেমা, গানের সেলিব্রেটিদের মতো টিকটক সেলিব্রেটিও আছে। উদ্ভট তাদের আচার আচরণ কিংবা সাজগোজ।
কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে টিকটক ও লাইকি অ্যাপের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কারণ এই টিকটক মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেছে। সাধারণত কিশোর ও তরুণ বয়সের ছেলেমেয়ে এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে তাদের অনুভূতি ও বিভিন্ন কার্যক্রম ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশ করে। সাম্প্রতিককালে ওই অ্যাপগুলো ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকে ওই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে তারকা খ্যাতি অর্জন ও অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া টিকটক তারকা অপু (যিনি অপু ভাই নামে পরিচিত) তার কার্যক্রম ও ভিডিও নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। তার ভিডিও দেখে বোঝা যায়, সেখানে ব্যাপক অশালীন শব্দের প্রয়োগ, অশ্নীল সংলাপ, বিকৃত শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অপু ‘টিকটক তারকা’ হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যায়। তার কয়েক লাখ ফলোয়ার টিকটক ও লাইকিতে দেখা যায়। কয়েক দিন আগে অপুকে টিকটক ও লাইকি থেকে কর্তৃপক্ষ বহিস্কার করে। অপু ও তার কিশোর গ্যাং বন্ধুরা রাস্তা বন্ধ করে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে ব্যাপক মারধর করে দু’জনকে গুরুতর আহত করে। পরে জেল হাজতেও নিয়ে যাওয়া হয় এই অপুকে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশও করেছে। উদ্ভট এই চুলের কালার করা ছেলেকে আদালতে বিচারক জিজ্ঞাস করেন, তোমার চুলের কালার এমন কেন? অপুর পক্ষের উকিল বলেন, অভিনয় করতে এমন করা লাগে। বিচারক বলেন, অভিনয় জগতের এমন খারাপ অবস্থা হয়েছে আমার জানা নেই। আসলেই টিকটকেও যদি এমন তারকার জন্ম হয় তাহলে অভিনয় জগতের তারকারা মুখ লুকিয়ে পালাবেন নিশ্চিত।
গত কয়েক দিন সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব এবং বেশকিছু টিকটক ও লাইকি ভিডিও দেখি, যা রুচির অযোগ্য এবং ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বিকৃত অঙ্গভঙ্গি এবং অশ্নীল শব্দ ও যৌনতা প্রয়োগ করে শুধু সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই ভিডিওগুলো তৈরি করে আপলোড করা হয়। টিকটক ও লাইকি ভিডিও যারা নির্মাণ করে, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী।
টিকটক অ্যাপ কেউ ভিডিও করছেন অর্থ উপার্জনের জন্য কেউবা শখের বসে। অনেকেই এইসব ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে বনে যাচ্ছেন তারকা। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের ছোট ছোট ভিডিও আসক্তির পর্যায়ে গেলে তা তরুণ সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
রাজধানীর রাস্তায় হঠাৎ এমন অঙ্গভঙ্গি দেখে যে কেউ প্রথমে অবাক হবেন হতে পারেন। যদি কেউ জেনে থাকেন, একটু ভালভাবে দেখলে বোঝা যাবে ভিডিও ধারণ হচ্ছে টিকটকের জন্য। শুধু সাধারণ জন নন টিকটক আসক্তিতে সেলিব্রেটি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার তরুণও।
কেবল মজা বা ব্যঙ্গ নয়, অর্থ উপার্জনের জন্যও এই মাধ্যমটি দারুণ জনপ্রিয়। অবশ্য টিকটকের মতো লাইকি সহ আরও বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে সেগুলোও সামাজিক যোগাযোগ বেশ চলছে।
বিশ্বের অনেক দেশ জনপ্রিয় এই ভিডিও অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। বিশেষ করে আমেরিকার অভিযোগ টিকটকের মতো চীনা অ্যাপ তার দেশের নাগরিকদের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। একই অভিযোগে টিকটক সহ বেশ কিছু চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ভারত। যদিও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটডান্স লিমিটেড বলছে, টিকটক ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় বরাবর জোর দিয়েছে তারা।
তবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া। যেভাবে এই টিকটকাররা সংস্কৃতিক অঙ্গনের বারোটা বাজাচ্ছে তাতে এখনি ব্যবস্থা না নিলে সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সভ্য সমাজের উঠতি তরুণরা। কারণ এভাবে সস্তায়ই তো জনপ্রিয়তা মেলে।