বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে হস্তান্তরের অভিযোগে টিকটক এখন প্রযুক্তি খাতের অন্যতম বিষয়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এ প্লাটফর্ম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে তথ্য পাচারের যে অভিযোগ ও উদ্বেগ তা কমাতে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মটি।
প্রজেক্ট ক্লোভার নামের নতুন এ প্রকল্পে আলাদা এক নিরাপত্তা কোম্পানিকে প্লাটফর্মটির তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবহার ও স্থানান্তরসংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকি করবে। নতুন এ পদ্ধতিটি ইউরোপের ব্যবহারকারীদের তথ্য সংরক্ষণ ও দেশটির বাইরে হস্তান্তরে কর্মীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করবে। ইউরোপিয়ান কমিশন এর আগে নিজস্ব কর্মীদের ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবহারকারী শনাক্তের উপায় এখন আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এক বিবৃতিতে বাইটড্যান্স মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নতুন সিকিউরিটি গেটওয়ে কোনো কর্মীর ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর তথ্যে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি ইউরোপের বাইরে তথ্য স্থানান্তরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বাড়তি স্তর যোগ করবে। স্থানীয়ভাবে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর ডাটা সংগ্রহের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, দুটি নতুন ডাটা সেন্টার চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে টিকটক। এগুলোর সর্বমোট বার্ষিক খরচ ১২০ কোটি ডলার। এর একটি আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে, অন্যটি নরওয়ের হামার শহরে অবস্থিত। দুটি ডাটা সেন্টারেই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করা হবে। তৃতীয় একটি পক্ষের সহায়তায় সেন্টারগুলো পরিচালিত হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সাল থেকেই প্রজেক্ট ক্লোভার নিয়ে কাজ করছে কোম্পানিটি। টিকটকের ইউরোপ অংশের সরকার সম্পর্ক ও পাবলিক পলিসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট থিও বারট্রাম বলেন, ‘নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় আমরা এ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। কারণ আমাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’
প্রজেক্ট ক্লোভার ঘোষণার আগের দিন ডেমোক্র্যাট পার্টির সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার ও রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর জন থুনের প্রচারিত এক বিলে সমর্থন জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশী মালিকানাধীন প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবেন তিনি। এ মাসের শেষে মার্কিন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেবেন টিকটকের প্রধান নির্বাহী শউ জি চিউ।
গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিবিসি রেডিও ৪’-এর ‘ওয়ার্ল্ড টুনাইট’ অনুষ্ঠানে টিকটক বলেছে, তাদের শঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক অস্থিরতায় তারা ‘বলির পাঁঠা’ হয়ে উঠছে।
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র অংশের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইকেল বেকারম্যান বলেন, ‘আমাদের এ বিস্তৃত ভূ-রাজনীতির মধ্যে আটকা পড়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা কঠিন। তবে, এর সঙ্গে সত্যিই আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘টিকটকই একমাত্র কোম্পানি নয়, যারা ব্যাপক হারে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। আর তাই এর কিছুসংখ্যক উদ্বেগ সব কোম্পানিতেও ছড়িয়ে পড়বে। সেজন্যই আমরা এমন এক সিস্টেম তৈরি করছি, যা নিশ্চিত করবে যে ব্যবহারকারীর ডাটা সুরক্ষিত আছে।’