ইউটিউব চ্যানেল খুলে এখন অনেকেই অর্থ আয় করেন। এমনকি অনেক নির্মাতা রীতিমতো তারকাও বনে গেছেন। অনেকেই ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেন। তবে এখনো মনিটাইজেশন বা অর্থ আয়ের সুযোগ চালু করতে পারেননি। আবার অনেক চ্যানেলে মনিটাইজেশন–সুবিধা চালু হলেও বিভিন্ন নীতি না মানার ফলে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউটিউব চ্যানেলের মনিটাইজেশনের খুঁটিনাটি এবং অর্থ আয় করার সুযোগ বন্ধের কারণ সম্পর্কে তথ্য থাকছে এ প্রতিবেদনে।
মনিটাইজেশন চালু হয় যেভাবে
ইউটিউবে চ্যানেল খোলার পর মনিটাইজেশন–সুবিধা পেতে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে (ইউপিপি) অংশ নিতে হয়। দুটি পদ্ধতিতে এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। প্রথমত, গ্রাহক বা সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা। দ্বিতীয়ত, কত ঘণ্টা ইউটিউব ভিডিও দেখা হয়েছে (ওয়াচটাইম)।
অবশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে বসবাসরত দেশে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে কি না। বাংলাদেশে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে। যেসব দেশে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে, তার তালিকা দেখা যাবে এই ওয়েব ঠিকানায়।
এবার জেনে নেওয়া যাক গ্রাহকসংখ্যা ও ওয়াচটাইম সম্পর্কে। ২০২৩ সালে ন্যূনতম গ্রাহকের সংখ্যা ১ হাজার থেকে কমিয়ে ৫০০ করে ইউটিউব। পাশাপাশি ইউটিউব ভিডিওতে বিগত এক বছরে ৩ হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম থাকতে হয় অথবা বিগত ৯০ দিনে ইউটিউব শর্টস ভিডিওতে ৩০ লাখ ভিউ থাকতে হয়। এ ছাড়া গত ৯০ দিনে অবশ্যই ন্যূনতম ৩টি ভিডিও প্রকাশ করার শর্ত রয়েছে। পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে গুগলের অ্যাডসেন্স অ্যাকউন্ট যুক্ত থাকতে হবে।
যেসব শর্ত মানতে হবে
ইউটিউব চ্যানেলে মনিটাইজেশন–সুবিধা চালুর জন্য কিছু নীতি ও শর্ত মানতে হয়। সেগুলোর তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
১. গুগল অ্যাডসেন্স পলিসিস
২. কপিরাইট গাইডলাইনস
৩. ইউটিউবের শর্তাবলি
বিভিন্ন কারণে ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেখে নেওয়া যাক।
১. ইউটিউব চ্যানেলের মনিটাইজেশন নীতিমালায় থাকা বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। সাধারণত স্প্যাম, নগ্নতা ও যৌন উদ্দীপক আধেয় বা কনটেন্ট, শিশুদের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলে এমন আধেয়, ক্ষতিকারক বা বিপজ্জনক আধেয়, ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ায় এমন বক্তব্য (হেটস্পিচ), হয়রানি ও সাইবার বুলিংয়ের কারণে মনিটাইজেশন নীতিমালা ভঙ্গ হতে পারে।
২. অনুপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের কারণে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। অশালীন ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
৩. আধেয়তে সহিংসতা থাকলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। তাই রক্তপাত, আঘাত, সহিংসতা ইত্যাদি ভিডিওতে প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. আধেয়তে মাদক ও তামাক–সম্পর্কিত বিষয়বস্তু থাকলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। মাদক ও তামাক সমাজের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ইউটিউবে এ ধরনের আধেয়র কারণে মনিটাইজেশন বন্ধের শঙ্কা রয়েছে।
৫. আধেয়তে আগ্নেয়াস্ত্র–সম্পর্কিত বিষয়বস্তু থাকলে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে।
৬. ভিডিওতে অন্যের ভিডিও বা অডিও ব্যবহারের কারণে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। এ জন্য সব সময় প্রকৃত আধেয় দিতে হবে। আবহসংগীত ব্যবহারে যেসব সংগীতের মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট নেই সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
৭. কৃত্রিমভাবে ভিডিওর ভিউ বাড়ালে অর্থ আয়ের সুযোগ বন্ধ হতে পারে। পরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য যন্ত্র থেকে নিয়মিত নিজেদের তৈরি ভিডিওতে ক্লিক করে ভিডিও দেখার সময় বাড়ান অনেকেই। কিন্তু একই যন্ত্র থেকে একই চ্যানেলে বারবার ভিডিও দেখা হলে চ্যানেলে মনিটাইজেশন–সুবিধা চালু করা হয় না।
এসব ছাড়াও বেশ কিছু চ্যানেলে মনিটাইজেশন–সুবিধা চালু করে না ইউটিউব। এগুলো হলো ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানো চ্যানেল, অশ্লীল ভিডিওর চ্যানেল, ধ্বংসাত্মক ও ভয়ংকর কনটেন্টনির্ভর চ্যানেল, অন্যের নাচের অনুকরণে ভিডিও চ্যানেল, রিমিক্স ভিডিও চ্যানেল, কণ্ঠ বা ছবি ছাড়া গেমিং চ্যানেল, ছবি বা স্লাইড শো দিয়ে ভিডিও তৈরি করা চ্যানেল, কণ্ঠ ছাড়া একাধিক খেলার দৃশ্য যুক্ত করে ভিডিও চ্যানেল, একই চ্যানেলে বিভিন্ন শ্রেণির ভিডিওযুক্ত চ্যানেল, কণ্ঠ ছাড়া বিভিন্ন পণ্য বা সেবার রিভিউ করা চ্যানেল ইত্যাদি। তবে শিক্ষণীয় বিভিন্ন চ্যানেল, যেমন রান্না বা ছবি আঁকা শেখানোর ভিডিওগুলোয় কণ্ঠ না থাকলেও মনিটাইজেশন সুবিধা পাওয়া যায়।