সাবেক মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী অভিযোগ তুলেছেন, তার স্বামী মুফতি তালহা ইসলাম এখন পর্যন্ত নয়টি বিয়ে করেছেন। একসময় জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে আলোচনায় আসা হ্যাপী এবার অভিযোগ করেছেন, স্বামীর নির্যাতনের শিকার তিনি দীর্ঘদিন ধরে।
গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হ্যাপীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, মডেলিং ও অভিনয় জগত ছেড়ে নাজনীন আক্তার হ্যাপী ইসলামের পথে আসেন এবং প্রায় সাত বছর আগে নড়াইলের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি শহিদুল ইসলামের ছেলে মুফতি তালহা ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, তার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং অল্প সময়ের জন্য তাদের বিয়ে করেছেন।
আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, তালহা ইসলাম মোট ৯টি বিয়ে করেছেন। হ্যাপীর ওপর নিয়মিতভাবে চলেছে নির্যাতন—বিশেষ করে যৌতুকের জন্য। কথায় সামান্য মতবিরোধ হলেই হ্যাপীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো, এমনকি সন্তানও এই নির্যাতনের শিকার হতো বলে অভিযোগ।
হ্যাপী জানান, “আমি বারবার তালাক চাইতাম, কিন্তু প্রতি বারই ওর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তালাকের কথা বললেই সে শর্ত দিত—এক কোটি টাকা দিতে হবে অথবা সন্তানকে আজীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। কোনোদিন যেন তাকে দেখতে না পারি, এমন নিষ্ঠুর শর্ত!”
তিনি আরও জানান, মামলা করার পর থেকেই তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তার অভিযোগ, মামলার পরের রাতেই তালহা তার বাসায় লোকজন নিয়ে এসে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মালামাল নিয়ে গেছেন। পাশাপাশি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন।
হ্যাপীর ভাষ্য, “এতদিন চুপ ছিলাম, কারণ প্রতিনিয়ত ভয় আর নির্যাতনের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু এখন আর সহ্য করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে মুখ খুলতে হয়েছে।”
তালহা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
এর আগে হ্যাপী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, “আমার কাছে তার তিনটি বিয়ের কাগজপত্র আছে। বাকি গুলো যেন কাগজে না থাকে, সুযোগ বুঝে মৌখিক তালাক দিয়ে শেষ করা হয়। হয়তো এর বাইরেও আরও অনেক কিছু আছে, যা আমি জানি না। লাইভে যদি আসেন, তাহলে এই নয়টি বিয়ের মধ্যে কোনটি মিথ্যা নয়, আল্লাহর কসম করে স্বীকার করুন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “খুলনায় যেসব নারীকে আপনি গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিয়েছেন, তাদের সন্তানদের আপনি প্রায় দেখতেই যাননি। মাসে মাসে কিছু অর্থ পাঠালেও, কোনো খোঁজখবর নেন না। তাহলে আমার সন্তানকে নিয়ে এত আকুতি কেন? আমি কি সোনার ডিম পাড়া হাঁস?”
হ্যাপী এরপর তালহার করা নয়টি বিয়ের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন, ১. নাজনীন আক্তার হ্যাপী (তিনি নিজে),২. মারইয়াম (অবিবাহিতা, বয়স্কা, কাশ্মীর),৩. তামান্না (অবিবাহিতা, হাজারীবাগ),৪. হাফসা (ডিভোর্সি, তিন সন্তানের মা, খুলনা),৫. তাসলিমা (বিধবা, কয়েক সন্তানের মা, মানিকগঞ্জ),৬. তামান্না-২ (ডিভোর্সি, সন্তানের মা, উত্তরা),৭. নুর (বিধবা, দুই সন্তানের মা, চট্টগ্রাম),৮. খাদিজা (ডিভোর্সি, দুই সন্তানের মা, কেরানীগঞ্জ),৯. মুশফিকা (ডিভোর্সি, ১২ বছরের সন্তানের মা)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই তালহার সঙ্গে হ্যাপীর বিয়ে হয়, মোহরানা নির্ধারিত ছিল পাঁচ লাখ টাকা, যা এখনো পরিশোধ হয়নি। হ্যাপীর মা তাদের সংসারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা উপহার দেন। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়।
প্রথমদিকে স্বামী ভরণপোষণ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। হ্যাপীর অভিযোগ, চলতি বছরের ৪ মে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছেন। ১০ মে তালহা বাসায় এসে ব্যবসায়িক কারণে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালে হ্যাপীর ওপর চলে বর্বর মারধর ও তালাকের হুমকি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে হ্যাপী জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। পরে তিনি অভিনয় ছেড়ে ইসলামি জীবনধারায় প্রবেশ করে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন আমাতুল্লাহ। এরপর মাদরাসাশিক্ষক মুফতি তালহা ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।