টুইটারের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাইক্রোব্লগিং সাইটটির সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। নতুন সিইওর দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরাগ আগরওয়াল। অ্যাপল, অ্যামাজন ও অ্যালফাবেটের পথ অনুসরণ করে কোম্পানির পুরনো ও বিশ্বস্ত কর্মীর হাতেই সিইওর দায়িত্ব অর্পণ করছে টুইটার। খবর দ্য ভার্জ ও টেক টাইমস।
সোমবার নিজের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে টুইটার কর্মীদের উদ্দেশে ডরসি লেখেন, জানি না, কেউ জানেন কিনা, তবে আমি টুইটার থেকে ইস্তফা দিয়েছি। প্রায় ১৬ বছর ধরে আমাদের সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা থেকে সিইও, কখনো চেয়ারম্যান থেকে এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান, কখনো আবার অন্তর্বর্তীকালীন সিইও। অবশেষে মনে হচ্ছে আমার সরে যাওয়ার সময় এসেছে।
৪৫ বছর বয়সী ডরসির সরে দাঁড়ানো নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। অবশেষে সেই জল্পনাকল্পনাই সত্যি বলে জানালেন ডরসি। তার জায়গায় টুইটারের মুখ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) পরাগকে বেছে নেয়া হয়েছে। নতুন পদের দায়িত্ব পেয়ে ডরসিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরাগ আগরওয়াল।
টুইটারের দায়িত্ব নেয়ার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরাগকে অনেকেই গুগল-কর্তা সুন্দর পিচাই বা মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার মতো মানুষের কাতারে রাখছেন। ২০১১ সালে টুইটারে কাজ শুরু করেছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পিএইচডি ডিগ্রিধারী। ২০১৭-তে সিটিও হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই সর্বোচ্চ পদে উঠে এলেন পরাগ।
তবে টুইটারের সিইও হিসেবে পরাগের নিয়োগ বড় একটা চমক হিসেবেই দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিষ্ঠানের বাইরে স্বল্প পরিচিত ছিলেন এ প্রকৌশলী। জন্মতারিখ ঠিকমতো জানা না গেলেও তার আনুমানিক বয়স হতে পারে ৩৭ বছর। লিংকড ইন পেজ থেকে জানা গেছে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি, বোম্বে) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন পরাগ। তারপর ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে সাত বছর পড়াশোনা করেন এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ পরবর্তী সময়ে মাইক্রোসফট, এটিঅ্যান্ডটি ও ইয়াহুর মতো প্রযুক্তি কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করেন। ২০১১ সালে যখন টুইটারে যোগ দেন তখন মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মটির কর্মীর সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও কম। ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে টুইটারে বেশ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেন। সিটিওর দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে কোম্পানির বিভিন্ন স্তরে মেশিন লার্নিংয়ের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন তিনি। ২০১৯ সালের পর থেকে প্রজেক্ট ব্লুস্কাই নামে একটি প্রকল্পে কাজ করছেন পরাগ। স্থপতি, প্রকৌশলী ও ডিজাইনারদের স্বাধীন এ ওপেন সোর্স টিম টুইটারে আক্রমণাত্মক ও ভুয়া তথ্য ঠেকাতে কাজ করছে।
প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো যখন চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন নতুন সিইও নিয়োগ দিচ্ছে তারা। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছে অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিও। টুইটার সিইও হিসেবে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বেন পরাগ। প্লাটফর্মে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ঠেকানো থেকে শুরু করে মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যে তিক্ততা রয়েছে, তা কীভাবে সামলাবেন তা দেখার বিষয়। জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল সহিংসতার দায়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে টুইটার। ট্রাম্পের মতো অন্যান্য রাজনীতিবিদের জন্যও কি একই পদক্ষেপ নেয়া হবে, বিশ্বজুড়ে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ঠেকানোর কাজটা কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা।
টুইটারের বাজার সম্প্রসারণ হবে পরাগের দায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ২০২৩ সালের মধ্যে ৩১ কোটি ৫০ লাখ মনিটাইজযোগ্য দৈনিক ব্যবহারকারী পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টুইটার। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি তাদের আয় দ্বিগুণ বাড়াতে চায়। ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে টুইটারের আয় হয়েছে ১২৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে বিজ্ঞাপন থেকেই এসেছে ১১৪ কোটি ডলার।