সাইবার অপরাধীদের জন্য অপরিহার্য টুল এ পরিণত হয়েছে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ড। মূলত গেইমারদের জন্য বানানো প্ল্যাটফর্মটি সাম্প্রতিক সময়ে ম্যালওয়্যার সংগ্রহ, সরবরাহ এবং হোস্টিং-এর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সোফোস-এর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকরেডার জানিয়েছে, চলতি বছরের মে-জুন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এক’শ ৪০ গুণ বেশি ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ডিসকর্ডে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ১৭ হাজার ভিন্ন ভিন্ন ম্যালওয়্যারের ইউআরএল পেয়েছে ডিসকর্ডের কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্কে। যার মধ্যে অন্তত পাঁচ হাজার এখনও সক্রিয় আছে। এই ম্যালওয়্যারগুলোর বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করে।
সোফোস-এর জ্যেষ্ঠ্য ঝুঁকি গবেষক শন গ্যালাহার-এর মতে, ডিসকর্ড সাইবার অপরাধীদের কাছে ক্রমশ একটি আকর্ষণীয় টুলে পরিণত হয়েছে এর অবকাঠামোগত ব্যাপ্তি আর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারী সংখ্যার কারণে।
ডিসকর্ড ম্যালওয়্যার অপারেটরদের একটা স্থিতিশীল, সহজলভ্য এবং বৈশ্বিক বিতরণ ব্যবস্থা সরবরাহ করে, সঙ্গে থাকে একটা মেসেজিং সেবা যা ওই অপারেটররা নিজেদের ম্যালওয়্যারের জন্য কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল চ্যানেলে পরিণত করতে পারে”– ব্যাখ্যা করেন তিনি।
ডিসকর্ডের ব্যবহারকারী সংখ্যার ব্যাপ্তি সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ও পরিচয় চুরির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে”, বলেন গ্যালাহার।
টেকরেডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হ্যাকাররা ম্যালওয়্যারগুলোকে গেইমের চিট কোড ছদ্মবেশে কম বয়সী ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছড়ান। কখনো কখনো গেইমারদের পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকা গেইম খেলার লোভ দেখিয়ে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ ঘটানো হয়।
ডিসকর্ডে প্রায় দুই দশকের পুরানো র্যানসমওয়্যারের উপস্থিতিও সনাক্ত করেছে সোফোস। এই ধরনের ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর ফাইল অ্যাক্সেসের পথ বন্ধ বরে দেয়, হ্যাকারের ‘ডিক্রিপশন কি’ ছাড়া ফাইল উদ্ধারেরও কোনো পথ থাকে না।
তবে ম্যালওয়্যার মোকাবেলায় ডিসকর্ডের তৎপরতার প্রশংসা করেছে সোফোস। ডিসকর্ড ব্যবহারকারীদের ‘টেইকডাউন রিকোয়েস্ট’-এ দ্রুত সাড়া দিলেও এর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নিজ উদ্যোগে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশান’ ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজস্ব ডিভাইসের জন্য ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সোফোস।
সোফোস-এর প্রতিবেদন নিয়ে ডিসকর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলো টেকরেডার। উত্তরে হ্যাকার ও ম্যালওয়্যার নিয়ে বহুস্তরের মোকাবেলা প্রক্রিয়ার কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্লাটফর্মের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডিসকর্ড স্বপ্রণোদিত মিশ্র প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে- যেমন অ্যান্টিভাইরাস স্ক্যানিং এবং রিঅ্যাক্টিভ রিপোর্ট- যেন ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস আমাদের সেবা ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানোর আগেই চিহ্নিত করা যায়। এ ছাড়াও আমরা স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ নিয়ে ওই উদ্দেশ্যে ডিসকর্ড ব্যবহার করছে এমন কমিউনিটি খুঁজে বের করে মুছে দেই। এরকম কোনো ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে অবগত হলে ওই কন্টেন্ট আমরা সঙ্গে সঙ্গে মুছে দেই এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই”, বলেন এক ডিসকর্ড মুখপাত্র।