‘পরিবেশ-বান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য তৈরিতে ওয়ালটন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পণ্যের গুণগতমান রক্ষায় ওয়ালটন সবকিছু করছে। ওয়ালটনের অত্যাধুনিক টেস্টিং ল্যাব এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম বিশ্বমানের। জলবায়ু উষ্ণায়ণ রোধে রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসর উৎপাদনে ক্ষতিকারক এইচএফসি গ্যাস ফেজ আউটের বিশ্বের প্রথম কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ।’
বলেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং কিগালি কুলিং এফিশিয়েন্সি প্রোগ্রাম (কেসিইপি)-এর ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রেনদেনিং ফর এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড একসেস টু কুলিং’ বিভাগের প্রধান মিস হেলেন পিকট। শনিবার (৬ জুলাই ২০১৯) গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে এইচএফসি ফেজ আউট প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনে জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য দায়ী এইচএফসি গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন, ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির অধীনে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এক বছর মেয়াদী ওই প্রকল্পের আওতায় ওয়ালটন কারখানা এবং সার্ভিস সেন্টারে ফ্রিজ এবং কম্প্রেসর থেকে পুরোপুরি এইচএফসি ফেজ আউট করে গ্রিন হাইড্রোকার্বন টেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে। উক্ত প্রকল্পে এইচএফসি-১৩৪এ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে পরিবেশ-বান্ধব এইচসি-৬০০এ (আইসোবিউটেন) রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করে এনার্জি এফিশিয়েন্ট বা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ তৈরি হচ্ছে। ‘কিগালি কুলিং এফিশিয়েন্সি প্রোগ্রাম’ এতে সহায়তা দিচ্ছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপির কেমিক্যাল ও মন্ট্রিল প্রোটোকল বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক আশরাফুল আম্বিয়া, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ড. সত্যেন্দ্র কুমার পুরকায়স্থ, প্রোগ্রাম অফিসার সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মুর্শেদ, আলমগীর আলম সরকার, ইউসুফ আলী, তাপস কুমার মজুমদার ও মোহাম্মদ তানভীর রহমান, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মীর মুজহিদিন ইসলাম, অপারেটিভ ডিরেক্টর তৌফিক-উল-কাদের ও ইসহাক রনি প্রমুখ।
হেলেন পিকট আরো বলেন, বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এখানে রেফ্রিজারেটর এবং এসির ব্যবহার আরো বাড়বে। ভোক্তারা যাতে পরিবেশ-বান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য আমরা ওয়ালটনের সঙ্গে কাজ করছি।
আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, উষ্ণায়ণ রোধে এইচএফসি ফেজ আউটে বিশ্বে এটাই প্রথম প্রকল্প। পরিবেশ-বান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য তৈরিতে ওয়ালটনের এ উদ্যোগ বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব উষ্ণায়ণ রোধে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে অপসারণের লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৬ সালে রুয়ান্ডার কিগালিতে এক সংশোধনীর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসরে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী হাইড্রো ফ্লুরো কার্বন (এইচএফসি) গ্যাস ব্যবহার বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে একবিংশ শতাব্দি শেষে অন্তত ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশ্ব উষ্ণায়ণ রোধ করা সম্ভব হবে।
ওয়ালটনের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বায়ুমন্ডলে বাৎসরিক প্রায় ২৩০ মেট্রিক টন এইচএফসি গ্যাসের নিঃসরণ রোধ হবে। এর মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ।