মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ট্রেড ইউনিয়ন ভাঙতে শীর্ষ ৫ জন কর্মকর্তাকে আকস্মিক ছাঁটাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ৪ জুলাই রাতে ‘জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন গ্রামীনফোন’ নামের এই ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি আহমেদ মঞ্জুরুদ্দৌলা, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইফতিয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন মিয়া এবং সদস্য মো. জসিমদ্দিনকে মেইলে ‘অব্যাহতি পত্র’ একসঙ্গে পাঠানো হয়।
এর ফলে সংগঠনটি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়লো। সংগঠনটি বলছে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে টার্মিনেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয় জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন গ্রামীনফোন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি আহমদ মঞ্জুরুদ্দৌলা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মাহাবুবুল আলম, বেসরকারি ব্যাংক এমপ্লয়ীদের সংগঠন ব্যাংকার্স ইউনিটির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, শ্রমিকনেতা মঞ্জুর মঈন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন দেশের শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারি পাওনা পরিশোধ না করা, নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওপর মানসিক ও আর্থিক অত্যাচার চালানো, ভোক্তা ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণাসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
ফলে দিন দিন এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ তারা প্রতিষ্ঠানের ইউনিয়নের ৫ কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে টার্মিনেট করেছে। এই টার্মিনেশনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মীদের চাকরি হারানোর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১২ সালে গ্রামীণফোনের ৫ হাজার কর্মী ছাটাই হতে হতে আজ ২ হাজার ২ শত জনে ঠেকেছে। এই অব্যাহত ছাটাই প্রক্রিয়ায় জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নকে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বাধা বিবেচনা করেই ইউনিয়নটি ধ্বংস করতে নেতৃবৃন্দের ওপরে এই জুলুম চলছে। সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খান বলেন, গ্রামীণফোনের মত প্রতিষ্ঠান বারবার শ্রম আইন, দেশের রাজস্ব আইনসহ ব্যবসায়ের সাধারণ নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেশের আইনবিরোধী ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে দেশের আইন-কানুন মানতে হবে এবং দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। গ্রামীণফোন এদেশকে বেওয়ারিশ বিবেচনা করে শুধু মুনাফাই লুটছে কিন্তু সামান্য ২ হাজার কর্মীর চাকরির নিশ্চয়তার অধিকারের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে না।
গ্রামীণফোনের কর্মীদের পেশাগত অধিকার ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের চাকরি রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান। অন্যথায় অপরাপর ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে গ্রামীণফোনের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউনিয়নের ৫ কর্মকর্তার চাকরি ফেরত দেয়া, ট্রেড ইউনিয়নের কোনো সদস্যকে ইউনিয়ন করার অপরাধে চাকরিচ্যুত না করা, চাকরিজীবীদের আইনগত সকল পাওনা পরিশোধ করা এবং প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ২৮ জুলাই বিটিআরসি, শ্রম দপ্তরের মহাপরিদর্শক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ৩০ জুলাই গ্রামীণফোন সেন্টারের সামনে নাগরিকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ, ৩১ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান এবং ১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয় ১ আগস্টের মধ্যে দাবি মানা না হলে দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণফোনে দুটি ট্রেড ইউনিয়ন। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন- গ্রামীণফোন অ্যাপ্লয়িজ ইউনিয়ন। ২০১৮ সালের ১ মার্চ জেনারেল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন গ্রামীনফোন (জিইইউজিপি) নামে দ্বিতীয় আরেকটু ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম শুরু করে। দ্বিতীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সকল কর্মীকে একযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে ৪ জুলাই।