চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অ্যাপলের মোট রাজস্বের ৪৮ শতাংশ আইফোন বিক্রি থেকে এসেছে। অথচ প্রথম প্রজন্মের আইফোন উন্মোচনের পর থেকে বরাবরই প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বের সিংহভাগ আইফোন বিক্রি থেকে এসেছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির প্রান্তিকভিত্তিক মোট রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব অর্ধেকের নিচে নেমেছে। তবে গত প্রান্তিকে অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব কমলেও সেবা ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের বাড়তে দেখা গেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও সিএনবিসি।
অ্যাপলের হিসাব বছর শুরু হয় অক্টোবর থেকে। সে অনুযায়ী এপ্রিল-জুন অ্যাপলের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক। গত মঙ্গলবার তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেছে অ্যাপল। এতে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে অ্যাপলের রাজস্ব ২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৩০০ কোটি ডলার কম। তৃতীয় প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে রাজস্ব আয়ে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস পূরণে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি থেকে অ্যাপলের রাজস্ব ২ হাজার ৬৫৪ কোটি ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল।
২০১৮ সালে একযোগে নতুন তিন আইফোন উন্মোচন করেছিল অ্যাপল। এগুলো হলো— আইফোন এক্সএস, আইফোন এক্স ম্যাক্স ও সাশ্রয়ী সংস্করণ আইফোন এক্সআর। বৈশ্বিক বাজারে ডিভাইস তিনটি খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। যে কারণে আইফোন বিক্রিতে ভাটা পড়ে। এছাড়া আইফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে খারাপ সময় পার করছে অ্যাপল। চীনা ডিভাইস নির্মাতাদের কারণে চীনের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে চাপে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে আইফোন বিক্রি থেকে এর রাজস্ব ক্রমান্বয়ে কমছে। আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন আইফোন উন্মোচন করতে পারে অ্যাপল। ডিভাইসগুলো খুব বেশি সাড়া ফেলতে সক্ষম হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাপলের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন খাত মিলিয়ে এখন অ্যাপলের কাছে রয়েছে নগদ ২১ হাজার ৬০ কোটি ডলার, যা চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) চেয়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ কম। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ানে ২২ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার নগদ অর্থের মজুদ থাকার তথ্য দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাপল নতুন খাতে ব্যবসা বাড়াতে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের পাশাপাশি অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণে জোর দিচ্ছে। গত সপ্তাহে ১০০ কোটি ডলারে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ইন্টেলের স্মার্টফোন মডেম চিপ বিভাগ অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। বিভিন্ন কাজে ব্যয় বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির নগদ অর্থের মজুদ কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আইফোনকেন্দ্রিক উদ্ভাবন এখন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। আইফোনের বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা ব্যবসা বিভাগ ও নতুন অ্যাপল টিভি প্লাস স্ট্রিমিংয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে অ্যাপল। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বে অ্যাপ স্টোরসহ বিভিন্ন সেবা খাতের গুরুত্ব বাড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে বাধ্য হচ্ছে অ্যাপল। গত বছর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে টেক্সাসের অস্টিন ক্যাম্পাসে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাম্পাসটিতে ১৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে অ্যাপল। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালে প্রথম প্রজন্মের আইফোন উন্মোচন করেছিল অ্যাপল। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের সিংহভাগ আইফোন বিক্রি থেকে এসেছে। ২০১২ সালেও একবার অ্যাপলের মোট রাজস্বে আইফোনের অবদান ৫০ শতাংশের নিচে নামে।