এখন আর মশা মারতে কামান দাগতে হবে না। হন্যে হয়ে খুঁজতে হবে না ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বাসস্থল বা প্রজননক্ষেত্র। মশা তাড়ানোর এ্যাপ কি কাজের নাকি ভুয়া? যতটুকু মনে হয়, তা হল ভুয়া। কারণ ইলেক্ট্রনিক মশা তাড়ানোর যন্ত্রই বলুন আর এ্যাপই বলুন, সব মশা তাড়ানোর কোন মোক্ষম যন্ত্র এখনো পাওয়া যায়নি ।এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাবেক সিস্টেম অ্যাডমিন আজাদুল হক।
আজাদুল হকের স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো-
সেই ছোট বেলায় একটা বিজ্ঞান মেলায় প্রথম শুনেছিলাম ইলেক্ট্রনিক মশা তাড়ানোর যন্ত্রের কথা। তখন থেকেই মনে হত এটা তো হতেই পারে। মশার পাখা নাড়ানোতে একটা শব্দ হয় যার একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সী আছে, এটাকে বলে উইংবীট ফ্রিকোয়েন্সী। মানে মশা এক সেকেন্ডে এতবার পাখা নাড়ে। পুরুষ মশার এক রকম ফ্রিকোয়েন্সী আবার মেয়ে মশার আরেক রকম। মেয়ে মশার আওয়াজে পুরুষ মশা বেশী আকৃষ্ট হয়। কিন্তু মেয়ে মশারা আবার পুরুষ মশার পাখার আওয়াজে তেমন পাত্তা দেয় না।
যেমন এডিস এডিপ্টি মশা যা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে, তার পুরুষ মশার ফ্রিকোয়েন্সী হল ৫৭১ থেকে ৮৩২ হার্টজ আর মেয়ে মশার ৪২১ থেকে ৫৭৮ হার্টজ (অন্য গবেষনায় বলে ৩৫০-৬৬৪, কারণ এটা তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল)। অন্য মশার আবার ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সী থাকতে পারে। অনেকে বলে ২০ কিলো হার্টজ থেকে ১০০ কিলো হার্টজ হল মশার ফ্রিকোয়েন্সী। এগুলো বিজ্ঞানীদের মতামত এবং বিভিন্ন পরীক্ষা, নিরীক্ষার ফসল।
হ্যাঁ অবিশ্বাস্ব্য হলেও সত্যি যে মশা তাড়ানোর জন্য এ্যাপ আছে। এই এ্যাপ গুলো একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সীতে শব্দ সৃষ্টি করে। কিন্তু তাতে লাভ কি? লাভ হল এই যে এই আওয়াজে মশা ভয় পায়। মনে করে ওকে খেতে আসছে কেউ। তাই সে পালায়। এটা হল একটা থিওরী।
আরেকটা থিওরী হল, যদি ৩৬ কিলোহার্টজের একটা শব্দ তরঙ্গ তৈরী করা যায় তাহলে তা মশার পাখার ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। সে উড়তে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে তাই সে ঐ এলাকা ছেড়ে পালায়। কি দরকার এত কষ্ট করে ওড়ার?
আমার এই থিওরীটা পছন্দ হয় কারণ খুব ভাল শ্রবণ শক্তি থাকলে আমরা শুনতে পাই ২০ হার্টজ থেকে ২০ কিলো হার্টজ পর্যন্ত। তাই ৩৬ কিলো হার্টজ আওয়াজ আমরা শুনতে পাব না কিন্তু মশাদের খবর আছে।
এই রকম একটা সার্কিট তৈরী করা খুবই সহজ। তবে এটা কাজ করে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে, দ্বিমত আছে। কেউ বলে কাজ করে কেউ বলে করে না। হয়ত কিছু মশা পালিয়ে যায়, কিন্তু বদমাশ মশাগুলো পালায় না। কে জানে?
তবে আমি বলি এই ডেঙ্গু জ্বরের সময় স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাসে এটা একটা সুন্দর প্রজেক্ট হতে পারে। এতে ছাত্র/ছাত্রীদের মন অন্য দিকে ধাবিত হবে, তারা আনন্দ পাবে আর বুঝতে পারবে যে বিজ্ঞান শুধু মুখস্থ করার বিষয় নয়। লব্ধ জ্ঞান যদি জীবনে কাজে না লাগানোই যায়, মানুষের সেবায় নাই আসে, তবে তা জ্ঞান নয়, শুধু পুঁথিগত বিদ্যা।
এবার শেষ কথায় আসি। মশা তাড়ানোর এ্যাপ কি কাজের নাকি ভুয়া? যতটুকু মনে হয়, তা হল ভুয়া। কারণ ইলেক্ট্রনিক মশা তাড়ানোর যন্ত্রই বলুন আর এ্যাপই বলুন, সব মশা তাড়ানোর কোন মোক্ষম যন্ত্র এখনো পাওয়া যায়নি। মশা তাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর রেপেলেন্ট এখনো ডীট (তবে ৩০% এর নীচে) আর লেমন ইউক্যালিপ্টাস তেল।
নিজ বাসা, কাজের স্থান এবং পারলে নিজ এলাকা পরিস্কার রাখুন। ময়লা ড্রেন, জমানো পানি যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। হাত, পা ঢেকে রাখুন, মোজা পড়ুন, ফ্যানের সামনে থাকুন, পারলে বাসায় ধুপ ব্যবহার করুন অন্তত একবার প্রতি সন্ধ্যার পর, সম্ভব হলে গায়ের উন্মুক্ত জায়গায় যেমন ঘাড়ে, পায়ের গোড়ালিতে লেমন ইউক্যালিপটাস তেল মাখুন। সব্বাই সুস্থ থাকুন, এই কামনায়।