অ্যাপল (ফল), টুইট (পাখির কিচির মিচির), ক্লাউড বা মেঘ এবং স্ট্রিম বা স্রোত—এমন কিছু শব্দ, যা এক সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছিল। শব্দগুলো এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রযুক্তিগত বিশ্বের সমার্থক হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ স্বতন্ত্র দাতব্য সংস্থা ‘ন্যাশনাল ট্রাস্ট’-এর এক জরিপে উঠে এসেছে প্রকৃতির শব্দগুচ্ছে প্রযুক্তির আগ্রাসনের কারণে এমন ঘটছে।
ন্যাশনাল ট্রাস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টুইট বা পাখির কিচির মিচির এক সময়কার বহুব্যবহূত একটি শব্দ। কিন্তু এখন শতকরা মাত্র একভাগ মানুষ বিভিন্ন আলোচনায় পাখির কিচির মিচির বোঝাতে টুইট শব্দটি ব্যবহার করেন। টুইট শব্দটি ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এখন মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে কোনো বার্তা দেয়াকে বোঝায়।
শুধু টুইট বা পাখির কিচির মিচিরের ক্ষেত্রেই নয়, একই পরিস্থিতি অ্যাপল (ফল), ক্লাউড (মেঘ) এবং স্ট্রিম বা স্রোতের মতো প্রকৃতিসংশ্লিষ্ট শব্দের ক্ষেত্রেও।
ঊনবিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকেও বিভিন্ন আলোচনায় স্ট্রিম শব্দটি স্রোত বা ছোট জলাধার অর্থে বেশি ব্যবহার করা হতো। ওই সময় শতভাগ মানুষ স্রোত বা জলাধার অর্থে স্ট্রিম শব্দটি ব্যবহার করতেন। এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ ক্ষেত্রে স্রোত বা ছোট জলাধার বলতে স্ট্রিম শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রিম শব্দটি অনলাইনে কোনো অডিও বা ভিডিও মিডিয়া ফাইল সঞ্চালন করা বোঝানো অর্থে ব্যবহার হচ্ছে।
একইভাবে ক্লাউড অর্থ মেঘ। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায় ক্লাউড শব্দটির ব্যবহার মেঘ অর্থে খুবই কম ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টদের মধ্যে মেঘ অর্থে ক্লাউডের ব্যবহার খুবই নগণ্য। একই পরিস্থিতি পুষ্টিগুণে ভরপুর অ্যাপল ফলের ক্ষেত্রেও। অ্যাপল শব্দটি এখন ফল অর্থের চেয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকরপোরেশনকে বোঝাতে বেশি ব্যবহূত হয়।
জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের শতকরা ২৫ শতাংশ বাবা-মা এবং দাদা-দাদী শব্দের অর্থ বদলে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা ভয় পাচ্ছেন যে পরবর্তী প্রজন্ম বদলে শব্দগুলোর মূল অর্থ হয়তো কখনো জানবে না।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের ভাষাবিজ্ঞানের ফেলো ড. রবি লাভ এ জরিপ পরিচালনা করেন। তিনি জানান, অনেক নতুন প্রযুক্তি বিমূর্ত এবং সহজে বোঝা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে এসে যায় মেটাফোর বা রূপক।
তিনি বলেন, সহজ-সরল ও প্রাণবন্ত শব্দ অনেক সময় কঠিন বিষয়কে সহজে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। যে বিষয়ে কেউ একজন নিজেও জানেন না, কিন্তু প্রকৃতির শব্দ ব্যবহারের কল্যাণে প্রযুক্তির অনেক বিষয়ে সহজে আলোচনা চালিয়ে নিতে পারেন।
গবেষকরা শব্দের অর্থ বদলে যাওয়ার প্রতিবেদন তৈরিতে শব্দের দুটি ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করেছেন। এর একটি ডাটাবেজে ছিল ৯০ দশকের ৫০ লাখ শব্দের কথোপকথন এবং দ্বিতীয় ডাটাবেজে ছিল ২০১০ সালের ১ কোটি ২০ লাখ শব্দের কথোপকথন।
ন্যাশনাল ট্রাস্টের আঞ্চলিক পরিচালক অ্যান্ডি বিয়ার বলেন, জাতি হিসেবে আমরা প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। কেবল বাইরে খেলাধুলা করাই প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ নয়। প্রযুক্তির পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে, যার জন্য প্রকৃতির কাছেই ফিরে যেতে হবে।