ভারত হুয়াওয়ের ব্যবসা বন্ধ করলে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে চীন। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেইজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত হুয়াওয়ের ব্যবসায় বিধিনিষেধ আরোপ করলে চীনে ব্যবসা করছে এমন ভারতীয় কোম্পানির অসুবিধা হবে। খবর রয়টার্স।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভারতে নতুন প্রজন্মের সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির পরীক্ষামূলক সেবা চালু করার কথা রয়েছে। ভারতের টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, এখানে ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপন ও পরিচালনায় চীনা কোনো কোম্পানি থাকবে কিনা সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সরঞ্জামের বাজারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। বর্তমানে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে গত মে মাসে কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন বাণিজ্য দফতর। মিত্রদেশগুলোকেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত ১০ জুলাই বেইজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়েকে বয়কট করতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে প্রচারণা চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে বেইজিংয়ের উদ্বেগের কথা ভারতকে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের ওই বৈঠকের রেকর্ড থেকে জানা যায়, বৈঠককালে চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ভারত যদি হুয়াওয়েকে বয়কট করে, তাহলে চীনে যেসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ‘পাল্টা অবরোধ’ আরোপ করা হবে।
এ ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, তারা আশা করছেন, ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণের কোম্পানি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভারত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুয়িং এক বিবৃতিতে বলেন, হুয়াওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে ব্যবসা করছে। ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে তাদের অবদান রয়েছে, এটা সবাই জানে। ভারতের ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণে চীনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের ইস্যুতে আমরা আশা করি, পারস্পরিক লাভের কথা চিন্তা করেই ভারত স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
এদিকে চীনের বাজারে ভারতীয় কোম্পানির উপস্থিতি অন্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় নগণ্য। ইফোসিস, টিসিএস, ড. রেড্ডি’স ল্যাবরেটরি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও মাহিন্দ্রার মতো কয়েকটি কোম্পানি উৎপাদন, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও আউটসোর্সিংয়ের ব্যবসা করছে।
তবে হুয়াওয়েকে কেন্দ্র করে চীন-ভারতের মধ্যে কিছু বিষয়ে চলমান বিরোধ নতুন করে বিস্তৃত ও গভীর রূপ নিতে পারে। যেখানে দুটি দেশই বিশেষ করে সীমানা বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা প্রশমনের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এর মধ্যে অক্টোবরেই হিন্দুদের পবিত্র শহর বারাণসীতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। চীনের সঙ্গে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছে ভারত। বারাণসীর বৈঠকে এটিও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখানে মোদি সরকারের কিছু রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। মোদির বিজেপি ঘনিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো চীনকে চরম মাত্রায় অবিশ্বাস করে। তারা অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতার কথা বলে এবং সাম্প্রতিক সময়ে হুয়াওয়ের সমালোচক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে।
গত সপ্তাহে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠিও লিখেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) অর্থবিষয়ক প্রধান অশ্বিনী মহারাজন। চিঠিতে তিনি ভারতে হুয়াওয়ের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, হুয়াওয়ে গোপন তথ্য চুরি করে দেশে পাঠানোর পাশাপাশি প্রয়োজনের সময় দূরবর্তী স্থান থেকেই ভারতে তাদের সেবা বন্ধ করে দিতে সক্ষম।
ভারতের টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ পার্লামেন্টে বলেছেন, পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি সেবা চালু করতে হুয়াওয়েসহ ছয়টি কোম্পানির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বাকি কোম্পানিগুলোর নাম বলেননি মন্ত্রী। তবে ধারণা করা যায়, সুইডিশ এরিকসন, ফিনিশ নকিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং এ তালিকায় রয়েছে।