ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, যে মূহুর্তে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াল, যে মূহুর্তে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির স্বাধীনতা উত্তর কালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিলেন, সেই মূহুর্তে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। সেই বিষয়টি জানা এবং বুঝার চেষ্টা করলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ সহজেই উন্মোচন করা সম্ভব। এতে উপলব্ধি করা যাবে যে মানুষটি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আন্দোলনে শরীক হয়েছেন, সেই মানুষটি পাকিস্তান ভেঙ্গে কেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, এই টুকু বুঝতে না পারলে আমাদের জন্য মূল সংকটটা থেকে যাবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় ডাক অধিদপ্তর মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস ২০১৯ উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও মিলাদমাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সদস্য উজ্জল বিকাশ দত্ত বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে একটা মানুষকে হত্যা করা না কিংবা একজন রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা নয় উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রচলিত যে সাম্প্রদায়িকতা ছিল সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে একটি ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করেছেন এবং ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করার প্রধানতম শক্তি ছিল যে এটি একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্রের ক্ষেত্রে একটি আমুল পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি চিন্তা করে দেখেছেন যে কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্রীয় ভূখন্ড কিংবা একটি মানচিত্র অথবা একটি পতাকা কিংবা জাতীয় সংগীত দিয়েই সে দেশের মানুষের মুক্তি আসে না। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে তিনি একটি কৃষি প্রধান দেশকে ভূমির ওপর সিলিং দেওয়া, শিক্ষার আলো ছড়ানো, বহি:বিশ্বের সাথে টেলিযোগাযোগ সম্প্রসারণসহ বিশ্বে বাংলাদেশের কানেকটিভিটি তৈরির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশকে একটি ঠিকানায় পৌছানোর যাত্রা শুরু করেছিলেন যা পাকিস্তান পারেনি। আর পারেনি বলেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে এগিয়ে।
মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বাংলাদেশ কনফেডারেশন বানানোর জন্য পঁচাত্তর পরবর্তী ২১ বছর চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ তা প্রতিহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশ হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর হাতে দেশ থাকবে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি থেকে বিচ্যূত হবে না, নিরাপদ থাকবে বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এর আগে মন্ত্রী বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারকা ডাকটিকিট, দশ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন।
পরে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে শহীদদের আতœার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত হয়।