বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার স্টেশনে ৭.৪ মেগা ওয়াটের সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান জেডটিই’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। ইপিসি কন্ট্রাক্টর হিসেবে জেডটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অন-গ্রিড এ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করে।
গত এপ্রিল থেকে এ সোলার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে এবং রাঙামাটি জেলায় উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে। এ অঞ্চলে অধিবাসীরা এ সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এ প্ল্যান্টের ডিজাইন করেছে জেডটিই এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হইয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে। প্রকল্পটি সরকারি গ্রিড-টাইড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে এডিবি নির্বাচিত জুরি কমিটির ‘এক্সামপ্লারি ইনোভেশন/হাই টেকনোলজি’ বিভাগে বিজয়ী হয়েছে।
রাঙামাটির কাপ্তাই প্রধান বাধে ৭.৪ মেগাওয়াটের এ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে। পিভি মডিউল ডিসির মাধ্যমে ভোল্টেজ উৎপাদন করবে এ পাওয়ার প্ল্যান্ট। যা ৪০০ভি এসি ইনভার্টের রূপান্তরিত হয়ে ১১কেভি পাওয়ার ট্রান্সফরমারে প্রতিস্থাপিত হবে। সকল শক্তি কন্ট্রোল কক্ষে ১১কেভি সুইচগিয়ারে সমন্বিত থাকবে। এ প্ল্যান্ট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে জেডটিই আরেকটি সাবস্টেশন নির্মাণ করেছে। এটা ১১কেভি টান্সমিশন লাইন দ্বারা যুক্ত। এ সাবস্টেশন থেকে বিপিডিবি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত কাপ্তাই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
এ প্রকল্প নিয়ে জেডটিই বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) প্যাং উই বলেন, ‘সৌরশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সর্বমোট শক্তির উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গ্রিন এনার্জি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নানা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে আর এমনই এক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
বিগত দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কোটি কোটি মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন ঘটেছে। তাদের সুস্থতার প্রশ্নেও অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আর এতোসব উন্নয়নের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে জ্বালানি ও শক্তি। বর্তমান সময়ে শক্তিকে বলা হচ্ছে অর্থনীতির অক্সিজেন। জ্বালানি ও শক্তি ছাড়া কোনো কারখানা কিংবা বড় শহর চলতে পারবে না। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাবে। কোনো শিল্প বিপ্লবও হবে না।
কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে জ্বালানি ও শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্বালানি ও শক্তি বিষয়ক পণ্য ও সেবাদানের মাধ্যমে এ খাত অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয় পাশাপাশি, অর্থনৈতিক রূপান্তরে ভূমিকা রাখে এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সবচেয়ে বড় অবদান কৃষি ও শিল্পখাতের। আর এ দুই খাতই আবার বিদ্যুতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৪ হাজার মেগাওয়াট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। এক্ষেত্রে, লক্ষ্য চাহিদার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১৫ বছরে এ খাতে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ করা হবে। যার মধ্যে থাকবে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা ও পরিবেশবান্ধব সব প্রকল্প। ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) অংশীদারিত্বের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে সুযোগ বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ এনডিসি জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা।