“ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো ফেস রিকগনিশন ও যানবাহনের নাম্বার প্লেট চিহ্নিতকরণ আইপি ক্যামেরা বসেছে সিলেট নগরীতে। সিলেটকে স্মার্ট শহরে রূপান্তরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এ উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার বিকেলে এ দুটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
এ দুই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সিলেট নগরী আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা। এরফলে অপরাধে জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা কালো তালিকাভুক্ত যানবাহন নগরীর সড়ক দিয়ে চলাছর করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুলিশের কাছে বার্তা পৌঁছে যা্বে। এতে অপরাধীকে শনাক্ত করা অনেক সহজ হবে বলে দাবি সংশ্লিস্টদের।
শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও প্রধান তথ্য কমিশনার মুর্তুজা আহমেদ।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বাস্তবায়নাধীন “ডিজিটাল সিলেট সিটি” প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ’পাবলিক ওয়াইফাই জোন” ও “আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বলিত আইপি ক্যামেরা বেজড সার্ভেলেন্স সিস্টেম” এবং তথ্য কমিশনের উদ্যোগে বাস্তবায়িত “তথ্য অধিকার(আরটিআই) অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম” এর পাইলটিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
সংশ্লিস্টরা জানান, এ প্রকল্পে সিলেট নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১১০টি অত্যাধুনিক আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বলিত আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জিন্দাবাজার পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, লামা বাজার পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, মাজারগেট, জেলখানা পয়েন্ট, সুবিদ বাজার পয়েন্ট, শাহী ঈদগাহ এলাকাসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এসব আইপি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। স্থাপনকৃত এসব আইপি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিলেট কোতয়ালি মডেল থানায় মনিটরিং রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এক্ষেত্রে অপরাধে জড়িত কোনো অপরাধী অথবা কালো তালিকাভুক্ত যানবাহনের নাম্বার যদি আইপি ক্যামেরার আওতাভুক্ত কোনো এলাকায় ধরা পড়ে, তবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অটোমেটিক সিগন্যাল বেজে উঠবে, যা অপরাধীকে শনাক্ত করতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে (এসএমপি) দ্রুত সহায়তা করবে।
তাছাড়া পুলিশ চাইলে যে কোনো অপরাধীর ছবি অথবা গাড়ির নম্বর দিয়ে আইপি ক্যামেরার সার্ভারে অনুসন্ধান (সার্চ) করে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করতে পারবে। এই অত্যাধুনিক সিস্টেমটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করবে।
এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট নগরের ৬২টি স্থানে মোট ১২৬ এক্সেস পয়েন্টের মাধ্যমে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হবে। এখান থেকে সিলেটবাসীরা বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারবে এবং বিভিন্ন প্রকার সেবা নিতে পারবে। এই ট্র্যাকিং সিস্টেম এর সমস্ত সল্যুশন এবং ডিভাইস প্রদান করছে হুয়াওয়ে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, “এই মুহুর্তে যেই নিরাপত্তা সিস্টেমগুলো উন্নত দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে আমরা সেগুলো এখন বাস্তবায়ন করছি। উন্নত দেশ, যাদের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি তারা তাদের দেশের জনগণকে যে সেবা দেয়, আমরা আমাদের জনগণকে সেই একই সেবা প্রদান করছি।
এখন যেহেতু সিলেটে অত্যাধুনিক মনিটরিং ও ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়ে গেছে, তাই নিশ্চিতভাবে শহরকে আরো বেশি নিরাপদ বলা যায়। সিলেটের ক্ষেত্রে আমি আজকে যা দেখেছি, ঠিক সেরকম ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই করছে হুয়াওয়ে। একটি বিদেশী কোম্পানির এমন প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি হুয়াওয়ে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি এখন বন্দুক পিস্তল নিয়ে রাস্তা পাহারা দেওয়ার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। এখন প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এরকম আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বলিত বিভিন্ন ক্যামেরা স্থাপন করে মনিটরিং সেন্টার থেকে সার্বক্ষনিক নজরদারি করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। নিশ্চিতভাবে সিলেট শহর এখন অনেক বেশি নিরাপদ এবং বাংলাদেশের জন্য একটি রোল মডেল। হুয়াওয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অংশীদার।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তারা প্রযুক্তিগত সেবা ও সমাধান প্রদানের লক্ষ্যে স্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাষ্ট্রির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের পাশে থাকার জন্য আমি তাদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মধুসূদন চন্দ, বিসিসি’র সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং ও সার্টিফিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এবং প্রধান সল্যুশন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।