কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যুগে সবেমাত্র প্রবেশ করছে বিশ্ব। আর শুরুর এ সময়েই যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে কোয়ান্টম সুপ্রিমেসি বা কোয়ান্টাম আধিপত্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন গুগলের বিজ্ঞানীরা।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইটে গুগলের একটি গবেষণাপত্রে এ দাবি করা হয়েছে। যদিও গবেষণাপত্রটি পরবর্তীতে নাসার ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলা হয়।
গবেষণাপত্রটির তথ্যানুসারে দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গুগলের বিজ্ঞানীরা এমন একটি কম্পিউটার তৈরি করেছেন যা প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর সাধ্যের বাইরে ক্যালকুলেশন করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এটিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অর্জন হিসেবে অভিহিত করেন।
কোয়ান্টাম আধিপত্য হলো যখন একটি বিশেষ ডিভাইস, যার নাম কোয়ান্টাম কম্পিউটার, একটি একক ক্যালকুলেশন পরিচালনা করতে পারে যা প্রচলতি কোনো কম্পিউটারের পক্ষে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
বর্তমান বিশ্বে গুগলের পাশাপাশি আইবিএম, মাইক্রোসফট, ইন্টেল সহ অন্যান্য শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে কাজ করছে। কোয়ান্টম কম্পিউটারের গঠন প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজ্ঞানীরা এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বহুদিন থেকেই প্রত্যাশা করছিলেন- মাইফলকে পৌঁছাতে সক্ষম এমন কোয়ান্টম কম্পিউটার তৈরি করবে গুগল।
বর্তমানে প্রচলতি সকল কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি সংখ্যা ০ অথবা ১ এর মাধ্যমে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার ০ ও ১- দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এমনকি একই সময়ে একই সঙ্গেও সংখ্যা দুটির প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। দুর্বোধ্য ও জটিল কোয়ান্টাম মেকানিকসের ওপর নির্ভরশীল এই কম্পিউটার। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে ধরনের ক্যালকুলেশন করে, সেগুলো বর্তমানের কম্পিউটারের পক্ষে করা অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভবও।
নাসার ওয়েবসাইটে গুগলের গবেষণাপত্রটি নজরে আসে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের। যেখানে বলা হয়, কোম্পানিটির তৈরিকৃত কোয়ান্টাম প্রসেসর একটি বিশেষ ক্যালকুলেশন সম্পন্ন করতে সময় নিয়েছে ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ড, যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত কম্পিউটারের সময় লেগে যাবে প্রায় ১০ হাজার বছর।
মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলার মতে, প্রযুক্তি বিশ্বকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে যাচ্ছে তিন প্রযুক্তি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বাকি দুটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর)।
গুগলের উদ্ভাবন সম্পর্কে কোয়ান্টাম সফটওয়্যার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান রিভারলেনের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ব্রেকিয়ালি বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রথমবারের মতো কেউ দেখিয়েছে যে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো সুপার কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
গুগল এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাবে কিছু জানায়নি।