অ্যাপলের জন্য সপ্তাহটা ভাল কাটেনি। আইওএস ১৩ চালুর সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা প্রশ্নে জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে। আপডেট আনতে হয়েছে তড়িঘড়ি করে। এরই মধ্যে কয়েক কোটি আইফোন হ্যাকিং ঝুঁকিতে পড়েছে। সেইসঙ্গে ফাঁস হয়েছে আগামি বছরের সম্ভাব্য আইফোনের নকশা।
এবার নিজের ক্রেতাদের জন্য মাথাব্যাথা তৈরি করার মতো নতুন নোটিশ নিয়ে হাজির হয়েছে অ্যাপল।
অ্যাপল ‘জেনুইন আইফোন ডিসপ্লে বিষয়ে’ নামে একটি নতুন ঘোষণা দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি আইফোন ১১, আইফোন ১১ প্রো এবং আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স-এর ক্রেতাদের সাবধান করে দিচ্ছে। কী সেই সাবধানতা? সেটি হলো, আপনি যদি আইফোন ১১-এর মালিক হন এবং যদি আপনার ফোনের ডিসপ্লে ভেঙে যায় তবে অতি অবশ্যই অ্যাপল অনুমোদিত কারিগর দিয়ে অ্যাপল অনুমোদিত যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাপলের জেনুইন ডিসপ্লে ব্যবহার করেই সারাই করতে হবে।
যদি না করেন, তাহলে?
যদি এর কোনো একটা আপনি না মানেন তাহলে আপনার ফোনের হোম স্ক্রিনে একটি নোটিশ রাজফরমানের মতো ঝুলে থাকবে চারদিন। ওই ফরমানে বলা থাকবে এই ডিসপ্লেটি অ্যাপল চিনছে না।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, অ্যাপল কেবল তার গ্রাহকদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তবে সমস্যা অন্যখানে।
কী সেই সমস্যা?
অ্যাপল বলছে, “কেবল অ্যাপলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারগির এবং অ্যাপল অনুমোদিত যন্ত্র ব্যবহার করে আইফোন ডিসপ্লেগুলি প্রতিস্থাপন করা উচিত।” এখানে খেয়াল করার বিষয় ওই যন্ত্র প্রসঙ্গটি। আপনার কারিগর যতোই অ্যাপল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকুন না কেন, যতোই ‘জেনুইন’ ডিসপ্লে ব্যবহার করা হোক না কেন,সারাইয়ের যন্ত্র যদি অ্যাপলের কাছ থেকে নেওয়া না হয় তাহলেও ওই বার্তা ঝুলে থাকবে আপনার হোমস্ক্রিনে।
মূল্য
অ্যাপল বলছে, একটি আইফোন ১১ ডিসপ্লে প্রতিস্থাপন করতে লাগবে ১৯৯ ডলার, আইফোন ১১ প্রো ডিসপ্লে প্রতিস্থাপন করতে ২৭৯ ডলার এবং আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স ডিসপ্লে প্রতিস্থাপনের জন্য ৩২৯ ডলার লাগবে। আপনি যদি অ্যাপল কেয়ার+ সেবাটি কেনেন তাহলে অবশ্য ২৯ ডলারেই বদলে নিতে পারবেন ডিসপ্লে। কিন্তু ওই অ্যাপল কেয়ার সেবা কিনতে আপনার লাগবে ১৯৯ ডলার।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আইফোনের জন্য বিক্রয়পরবর্তী সেবা দিয়ে থাকে। দেশে বহুল ব্যবহৃত আইফোন মডেলগুলোর ডিসপ্লের জন্য যেখানে অ্যাপলের জন্য নির্ধারিত খরচে ডিসপ্লে বদলে নেওয়া যায়। আর ওই খরচের চেয়ে অনেক কম খরচে ডিসপ্লে পাল্টে নেওয়া যায় ফোন সারাইয়ের দোকান থেকে যেগুলো অ্যাপল অনুমোদিত নয়। একই পরিস্থিতি দেশের বাইরেও।
এখন দেখা যাচ্ছে অ্যাপল চাইছে এই অল্প খরচে সারাইয়ের সুবিধা কেড়ে নিতে। প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বছর ধরেই পণ্য সারাইয়ের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে এবং অ্যপলের আচরণ যেন কঠোর হচ্ছে দিন দিন।
এখন উপায়?
আমেরিকায় ‘রাইট টু রিপেয়ার’ বা সারাইয়ের অধিকার নামে একটি আইনী দ্বন্দ্ব চলছে। এই আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হলো, অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো বিষয়টি নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছে নিজেদের আর্থিক লাভের বিষয়টি বিবেচনা করে। আইফোনের উদাহরণ দিয়ে বলা চলে, এই আন্দোলনের মূল চাওয়া হলো- যার ফোন তিনি ইচ্ছেমতো পছন্দের দোকান থেকে সারাই করবেন। তিনি যদি তার ফোনে সস্তার ডিসপ্লে ব্যবহার করতে চান তিনি তাই করবেন। এখানে ক্রেতার স্বাধীনতা থাকা উচিৎ এবং অ্যাপলের ‘মাতব্বরি’ থাকা উচিৎ নয়।
ওই আইনী লড়াইয়ের ফল আদালতে কী দাঁড়ায় সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে, এখন দেখা যাচ্ছে অ্যাপলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটিকেই আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।