বর্তমান যুগ হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। কম্পিউটার ছাড়া আজকাল সবকিছু অসম্ভব বলা চলে। অফিসের কাজ থেকে শুরু করে আউটসোর্সিং, স্কুলের সায়েন্স প্রোজেক্ট বানানো, বিভিন্ন ইভেন্টের ব্যানার তৈরি, কলেজের প্রেজেন্টেশনসহ অনেক কিছুই কম্পউটারের মাধ্যমেই করতে হয়। তাছাড়া কম্পিউটারের কিছু নির্দিষ্ট কিছু কাজ জানা থাকলে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।
এইসবের মধ্যে কিছু কাজ শিখতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা প্রয়োজন। ইন্টারনেট সংযোগ পুরো পৃথিবীকে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসে। এতে করে কাজ শিখা হয়ে উঠবে আরো সহজে। পরীক্ষার আগে পড়া যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি চাকরিতে ঢোকার আগে কিছু কম্পিউটার জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন।
কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা এখন যেকোনো চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম্পিউটারের কাজের উপর কিছু জ্ঞান থাকলে ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে বেশ ভাল প্রভাব ফেলে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন বিষয়ে কম্পিউটার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন-
বাংলা ও ইংরেজি টাইপিং
মোবাইলে সবাই আরামসে টাইপ করতে পারলেও কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে টাইপ করা কিন্তু একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সাধারণত ইংরেজিতে প্রতি মিনিটে ৪০টি শব্দ এবং বাংলা ২৫টি শব্দ টাইপ করতে পারতেই হবে।
অনেকেই বিভিন্ন লেখা ভিত্তিক কাজ নিয়ে টাইপিস্টের কাছে যেয়ে থাকে। এখানে নিজেরাই যদি ভালোভাবে টাইপ করতে পারি তাহলে বাইরের কাউকে দিয়ে টাইপ করানোর প্রয়োজন হবে না। এতে করে নিজের অর্থ এবং সময়- দুটোই বাঁচবে।
এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে টাইপিং ছাড়া কোন চাকরি কিংবা ব্যবসায় ভাল করা সম্ভব নয়। কারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল লেখা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কাজেই কম্পিউটারে টাইপিংয়ের প্রয়োজন হয়। তাই যদি নিজেরাই টাইপিং দক্ষতাটা অর্জন করে করি তাহলে কোনো ঝামেলাই পড়তে হবে না।
ডকুমেন্ট তৈরি
কম্পিউটারের মাধ্যমে ডকুমেন্ট ফাইল তৈরি করা হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার স্কিল। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও গুগল ডকুমেন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই ফাইল তৈরি করা যায়। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড হলো বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ডকুমেন্ট তৈরির সফটওয়্যার। ৯০% মানুষ কাজের জন্য এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে থাকে।
ডকুমেন্ট ফাইলে শব্দ বড়-ছোট করা, হাইপার লিংক তৈরি করা, শব্দ বোল্ড, ইটালিক বিভিন্ন ফন্টে আনা, প্যারাগ্রাফ করা সহ আরো অসংখ্য ছোটখাটো স্কিল শিখে নেয়া খুব জরুরি। এই সফটওয়্যারগুলোর মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন ও নোট খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
প্রেজেন্টেশন
প্রোজেক্ট ডিসপ্লে ও প্রেজেন্টেশন তৈরি করার ক্ষেত্রে দুইটি সফটওয়্যার সবচেয়ে বেশি করা হয়। তা হলো গুগল স্লাইড এবং মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট। এই দুইটি সফটওয়্যার একই কাজে ব্যবহার করা হলেও এদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে রয়েছে অসংখ্য টুলস। যার মাধ্যমে খুব সহজেই প্রেজেন্টেশন আকর্ষণীয় করে তুলা যায়। আর গুগল স্লাইডে খুব বেশি টুল না থাকলেও চটজলদি প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজে এর কিন্তু জুড়ি মেলা ভার!
গুগল স্লাইড এবং মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট রয়েছে অসংখ্য স্লাইড তৈরি করার অপশন। এর মাধ্যমে ছবি অ্যাটাচ করা, মিউজিক অ্যাড করা, থিম পালটানো, ফন্ট চেঞ্জ করা, কালার এবং সাইজেও পরিবর্তন আনা যায়। বর্তমান সময়ে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই কম্পিউটার স্কিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাণিতিক সমস্যাবলী এবং ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট
গাণিতিক সমস্যা কিংবা কোনো হিসাব-নিকাশের কথা উঠলে তখন মনে আসে মাইক্রোসফট এক্সেল এর নাম। মাইক্রোসফট এক্সেল মূলত হলো একধরণের স্প্রেডশিট। সেখানে বিভিন্ন ধরণের টেবিলের মাধ্যমে কোনোকিছুর পরিসংখ্যান দেখানো হয়। যেমন: শিক্ষার্থীদের মার্কশিট, হিসাব-নিকাশ, অফিসের কর্মীদের কাজে আসার সময়সূচী ইত্যাদি। এই স্কিল অর্জনের মাধ্যমে খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রির কাজ করা যায়। আর বর্তমান আইসিটি খাতে ডাটা এন্ট্রির মতন কাজগুলোর ব্যাপক চাহিদা।
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছর জুড়েই কোনো না কোনো ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। আর ইভেন্টের প্রচারণার জন্য প্রয়োজন ম্যাগাজিন, ব্যানার ও পোস্টার। যদি কম্পিউটারে এডোবি ফটোশপ আর এডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে তো কথায় নেই। আজকাল যেকোনো কাজের জন্য এমন মানুষদের রিক্রুট করা হচ্ছে, যাদের ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর সম্পর্কে অন্তত সাধারণ জ্ঞান আছে। এগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
এছাড়া সেই সঙ্গে ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন পথ খুলে যায়। ফটোশপে বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবহার রয়েছে। যা ক্যারিয়ার তৈরি করা ছাড়াও পার্টটাইম চাকরি খুঁজে পেতে সহায়তা করে। এই দক্ষতা অর্জন করলে নিজের ফেসবুকের ছবিগুলোও হয়ে উঠবে অন্য সবার চেয়ে আকর্ষণীয়। এমনকি প্রেজেন্টেশনেও এই স্কিল কাজে আসবে। বিভিন্ন ইফেক্ট ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশনটি হয়ে উঠবে সহজবোধ্য ও আলাদা।
বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার
কম্পিউটার বা ফোনের কোনো পার্টসে সমস্যা হলে, সেটা ঠিক করার অন্তত বেসিক উপায়টা শেখা জরুরী। কীভাবে সফটওয়্যার কিনতে হয় এবং সেটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা উচিত। এছাড়াও পিসি কীভাবে পরিষ্কার এবং ভাইরাস মুক্ত রাখতে হবে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। র্যাম, হার্ডডিস্ক, বেসিক ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস সম্পর্কেও ধারণা রাখা প্রয়োজন।
অনলাইনে কাজ করা
আজকাল এমন অনেক ধরণের কাজ তৈরি হচ্ছে, যা ঘরে বসেই করা যায়। যেমন: আউটসোর্সিং, অনলাইন বিজনেস, ব্লগিং, প্রোমোটিং ইত্যাদি। সেইসব কাজ করার জন্য প্রয়োজন নিজের ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ। আর অনলাইনে এই কাজগুলো করতে হলে কম্পিউটার স্কিলগুলো অর্ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।