আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই একের পর এক ধাক্কা খেয়ে চলেছে ফেসবুকের বৈশ্বিক ডিজিটাল মুদ্রা উদ্যোগ। সারা বিশ্বের বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠন করা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ক লিবরা অ্যাসোসিয়েশন থেকে আগেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে পেপল। এবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে মাস্টারকার্ড, ভিসা, ইবের মতো বৈশ্বিক পেমেন্ট প্রতিষ্ঠান। এর মধ্য দিয়ে লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের ছয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের এ উদ্যোগ ত্যাগ করেছে। এটাকে লিবরার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করছেন টেকসংশ্লিষ্টরা। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
চলতি বছরের ১৮ জুন লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফেসবুক। ২০২০ সালের জুনে বৈশ্বিক এ ক্রিপ্টোকারেন্সির কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় লিবরা অ্যাসোসিয়েশনে পেপল, মাস্টারকার্ড, ভিসা, ইবে, স্ট্রাইপ ও পেইউ—এ ছয়টি অনলাইন লেনদেন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ছিল। গত সপ্তাহে লিবরা ছাড়ার ঘোষণা দেয় পেপল। এর পর পরই মাস্টারকার্ড, ভিসা, ইবে ও স্ট্রাইপের পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা আসে। ফলে প্রতিষ্ঠাতা ছয় সদস্যের মধ্যে শুধু নেদারল্যান্ডসভিত্তিক পেইউ এখনো লিবরা অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত রয়েছে। লাতিন আমেরিকায় লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান মার্কাদো পাগো লিবরা ছাড়ার কথা জানিয়েছে।
মার্কিন ই-কমার্স কোম্পানি ইবে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নীতিগতভাবে আমরা ফেসবুকের লিবরা ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্যোগকে সম্মান করি। তবে কোম্পানির নিজস্ব প্রয়োজন সামনে রেখে আমরা এ উদ্যোগের সঙ্গে এগিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্ট্রাইপের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক লেনদেন সহজ করার পরিকল্পনায় স্ট্রাইপের সমর্থন রয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লিবরার সক্ষমতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই। স্ট্রাইপ লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তবে সেটা এখনই নয়। পরবর্তী সময়ে এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তারা।
অন্যদিকে লেনদেন প্রতিষ্ঠান ভিসার একজন মুখপাত্র বলেন, গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর পর লিবরার সঙ্গে পুনঃসংযুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ সদস্য লিবরা ত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ জানায়নি। তবে টেকসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি লিবরা ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকের এ উদ্যোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিশেষত, লিবরা ব্যবহার করায় বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিংয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধির অভিযোগ এসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও ক্রিপ্টোকারেন্সি লিবরা নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে। লিবরার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গের ২৩ অক্টোবর মার্কিন কংগ্রেসের ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটির সামনে বিশেষ একটি শুনানিতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান লিবরা ত্যাগ করায় এ উদ্যোগে ফেসবুক ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ফেসবুকের লিবরা প্রকল্পের প্রধান ডেভিড মার্কোস বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে এটা কোনো ভালো খবর নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে লিবরা অ্যাসোসিয়েশন এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম।’
প্রতিষ্ঠানটির পলিসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান দান্তে দেসপার্তে এক বিবৃতিতে বলেন, ফেসবুক লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্টেকহোল্ডার বদলাবে। অনেকেই ছেড়ে যাবে। অনেকেই নতুন করে যুক্ত হবে। তবে আগামী বছরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। লিবরার সঙ্গে বিশ্বের অন্য শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্টেকহোল্ডারদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ফ্রান্স ও জার্মানি ইউরোপে লিবরার কার্যক্রম বন্ধের পক্ষে উদ্যোগ নিয়েছে। এমনকি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোমি পাওয়েল আপাতত এ প্রকল্প চালু না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার মতে, আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা রক্ষা, ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের সুযোগ বন্ধ করা এবং মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি কমিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণের পরই লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।