সীমিত মূলধন আর অসীম স্বপ্ন—এ দুইয়ের মেলবন্ধনে যাত্রা হয় যেকোনো স্টার্টআপের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোনো কোনো স্টার্টআপ মুখ থুবড়ে পড়ে। আবার কোনোটি বিনিয়োগকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রে আসে। দ্রুতই ফুলে-ফেঁপে ওঠে। একপর্যায়ে এসব স্টার্টআপের সামগ্রিক মূল্য শতকোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এসব স্টার্টআপকে টেক জগতে ‘ইউনিকর্ন’ নামে ডাকা হয়। ইউনিকর্নের সংখ্যা বিবেচনায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠেছে চীন। যদিও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ৮০ শতাংশের বেশি ইউনিকর্ন এ দুটি দেশে। চীনা প্রতিষ্ঠান হুর’ন ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসি।
হুর’ন ইনস্টিটিউট প্রতি বছরই ইউনিকর্নের বৈশ্বিক র্যাংকিং প্রকাশ করে। এ ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি গ্লোবাল ইউনিকর্ন লিস্ট ২০১৯ প্রকাশ করেছে। এতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একেকটি স্টার্টআপের মূল্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এগুলোর কার্যক্রম অবশ্যই বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত হতে হবে। এতে দেখা গেছে বিশ্বের ২৪টি দেশের ১১৮টি শহরে বিভিন্ন ইউনিকর্নের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
র্যাংকিং বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে চীনে সব মিলিয়ে ২০৬টি ইউনিকর্ন বা শতকোটি ডলারের বেশি মূল্যের স্টার্টআপ রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ২০৩টি ইউনিকর্ন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ইউনিকর্নের সংখ্যা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীন শীর্ষে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে এএফপি।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির ২১টি স্টার্টআপের মূল্য শতকোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ব্রিটেনে ইউনিকর্নের সংখ্যা ১৩টি। জার্মানি ও ইসরায়েলের সাতটি করে ইউনিকর্ন রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এ সংখ্যা ছয়টি। ইন্দোনেশিয়ায় পাঁচটি। তালিকায় ২৪টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ জায়গা পায়নি। অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে ইউরোপে সব মিলিয়ে ৩৫টি ইউনিকর্ন রয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ইউনিকর্নের ৮০ শতাংশই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে।
অন্যদিকে শহরভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ইউনিকর্ন রয়েছে চীনের বেইজিংয়ে। শহরটিতে ইউনিকর্নের সংখ্যা ৮২। তালিকায় এর পরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো। এ শহরে ইউনিকর্নের সংখ্যা ৫৫। চীনের সাংহাই ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যথাক্রমে ৪৭ ও ২৫টি ইউনিকর্ন পরিচালিত হয়। ভারতের শহরগুলোর মধ্যে বেঙ্গালুরুতে সবচেয়ে বেশি ৯টি ইউনিকর্ন রয়েছে।
শতকোটি ডলারের বেশি মূল্যের স্টার্টআপগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল। ২০১৪ সালে যাত্রা করা এ প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস ‘আলিপে’ পরিচালনা করে। বর্তমানে এ স্টার্টআপের মূল্য ১৫ হাজার কোটি ডলার। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাপ নির্মাতা বাইটড্যান্সের মূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০১২ সালে বেইজিংয়ে যাত্রা করা এ স্টার্টআপের অধীনে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক পরিচালিত হয়। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের ট্যাক্সি সেবাদাতা স্টার্টআপ দিদি। ২০১২ সালে যাত্রা করে বর্তমানে এর মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে।
৫ হাজার কোটি ডলার মূল্য বিবেচনায় তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মার্কিন টেক স্টার্টআপ ইনফোর। মূলত সফটওয়্যার ও ক্লাউড সেবা দেয় এ স্টার্টআপ। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে অন্য মার্কিন স্টার্টআপ জুল ল্যাবস। প্রতিষ্ঠানটি ই-সিগারেট তৈরি ও বাজারজাত করে।
ভারতীয় স্টার্টআপের মধ্যে ইউনিকর্নের তালিকায় জায়গা পেয়েছে পেমেন্ট সলিউশন প্লাটফর্ম ওয়ান৯৭ কমিউনিকেশনস। স্টার্টআপটির বর্তমান মূল্য ১ হাজার কোটি ডলার। রয়েছে ক্যাব ভাড়া নেয়ার অ্যাপ ওলা ক্যাব। এ স্টার্টআপের বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি ডলারে। একই পরিমাণ মূল্য নিয়ে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ভারতের শিক্ষা খাতের জনপ্রিয় স্টার্টআপ বাইজু।