তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ফেসবুক আইডি খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। নাম গোপন করে ইচ্ছেমতো ফেসবুক আইডি খুলে কেউ দেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা করবে, অপরের চরিত্র হরণ করবে, সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে তা হতে পারে না।
গতকাল রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে ‘সম্প্রচার গণমাধ্যমের সংকট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার ও পিআইবি যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, সম্প্রচার গণমাধ্যমের সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা। গণমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা হঠাৎ করে সমাধান সম্ভব না। দেশের বিজ্ঞাপন বিদেশের চ্যানেলে চলে যাচ্ছিল, এখন তা বন্ধ হয়েছে। সম্প্রচার মাধ্যম এখনো ডিজিটাল হয়নি। শিগগিরই এটা ডিজিটাল করতে চেষ্টা করছি। সিনেমা অনুমতি দিতে সেন্সরবোর্ড হয়ে আসতে হয়। কিন্তু একটি সিরিয়াল যার ৫০ বা একশো পর্ব রয়েছে তা তো শুধু সরকারের কাছে একটি চিঠি দিলেই অনুমতি দিয়ে দেব? এটা সমীচিন নয়। একটি কমিটি করে দেব, কমিটি যদি মনে করে যে সিরিয়ালটি দেশের ভাষা সংস্কৃতি, কৃষ্টির সঙ্গে কন্ট্রাডিক্ট করে না, তাহলে অনুমতি দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, টিআরপি করার জন্য কে লাইসেন্স দিয়েছে? তারা কি সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে? এভাবে তো চলতে পারে না। কোন নীতিমালার ভিত্তিতে টিআরপি হবে তা খুব সহসাই নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যারা টিআরপি করবে তাদের সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রেও আমরা একটি নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা আনতে চাই। সম্প্রচার আইনে টিভি সাংবাদিকদের চাকরি সুরক্ষা হবে। তবে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য আলাদা নীতিমালার কথা বলা হয়েছে। এ নীতিমালা থাকা দরকার। প্রতি সংবাদকর্মীর নিয়োগপত্র থাকা দরকার। তাদের সুরক্ষা দরকার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য অপারেটরগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার ও বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি তাদের দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারেও আমরা একটি আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এখানে একটি শৃঙ্খলা আসা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের হয়ে সাংবাদিকদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি, উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম মালিকদের বলতে চাই, আপনারা সাংবাদিকদের বঞ্চিত করবেন না। তাদের বেতনগুলো দ্রুত দিয়ে দেবেন। তারা কষ্ট করে কাজ করে। তারা যদি একযোগে স্ট্রাইক করে তাহলে কী হবে? তারা তো চাইলেই করতে পারে, কিন্তু করে না। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। সংবাদকর্মীদের দরদ দিয়ে মালিকরা অনুধাবন করবেন এবং অহেতুক কারও চাকরিচ্যুতি করবেন না বলে আশা করেন মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সংকট শুধু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নয়, প্রিন্ট মিডিয়াতেও রয়েছে। সমন্বিতভাবে মিডিয়ার অংশীজন, গণমাধ্যম ইউনিয়ন ও মিডিয়া মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে সংকট সমাধানে। সবাই মিলে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, সারা বাংলা ডটনেট ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক, সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ, এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।