গত বছর ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের তথ্য অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ফেসবুককে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি জরিমানার অর্থ ব্রিটেনকে পরিশোধে সম্মতি জানিয়েছে। ব্রিটেনের তথ্য কমিশনার অফিসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ফেসবুকের সবচেয়ে বড় তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পায়। রাজনৈতিক পরামর্শক ও তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় ফেসবুকের পৌনে নয় কোটি গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। এসব ভুক্তভোগী গ্রাহকের বেশি ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের। শুরুতে পাঁচ কোটি গ্রাহকের তথ্য বেহাত হয়েছে বলা হলেও পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায় প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা আরো বেশি। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা অনৈতিক উপায়ে এসব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। ফেসবুকের ভাষ্যে, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এর মধ্যে ১১ লাখ রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ফেসবুক ব্যবহারকারী।
অভিযোগ ওঠে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হাতিয়ে নেয়া বিপুল পরিমাণ তথ্য গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের পক্ষে ব্যবহার করে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার বিষয়ে গণভোটের ফলাফল এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ ছিল।
রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে যুক্তরাজ্যের ইনফরমেশন কমিশনারস অফিস (আইসিও)। টানা কয়েক মাস তদন্তের পর গত বছর জুলাইয়ে ফেসবুককে জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ব্রিটেনের ইতিহাসে তথ্য কেলেঙ্কারি নিয়ে এটাই কোনো ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অংকের জরিমানা। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এতদিন এ জরিমানার অংক কমানোর চেষ্টা চালিয়েছে।
ফেসবুকের পাশাপাশি আইসিও বিলুপ্ত হওয়া ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার মূল প্রতিষ্ঠান এসসিএল ইলেকশনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। এসসিএলকেও আর্থিক জরিমানার বিষয়ে ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
আইসিও জানিয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে, সে সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা ব্যবহারকারীদের কাছে দেয়নি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের যেসব ব্যক্তিগত তথ্য ছিল, সেগুলো যাতে তারা মুছে ফেলে, সেটি ফেসবুক নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে ফেসবুকের নিয়মনীতির লঙ্ঘন হয়েছে। যে কারণে ফেসবুককে জরিমানা করা হয়।
বিলুপ্ত হওয়ার আগে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা জানিয়েছিল, ফেসবুকের অনুরোধে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেই তারা হাতিয়ে নেয়া সব তথ্য মুছে ফেলেছে। তবে আইসিও দাবি করে, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত তথ্যের কপি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। তদন্তের এমন প্রমাণ মিলেছে।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ট্রাম্প শিবিরের পক্ষে কাজ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে প্রতিষ্ঠানটি বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার দাবি, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত তথ্য তারা ট্রাম্পের প্রচারণায় ব্যবহার করেনি।
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় আইসিও প্রথম কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেসবুককে বড় অংকের জরিমানা করে। সংস্থাটির ভাষ্যে, ৫৪ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্যের প্রযুক্তি জায়ান্টটির কাছে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানা পরিশোধ করা তেমন বড় কোনো বিষয় নয়। তবে এটি প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহারকারীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক করবে।