ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রেষ্ট সম্পদ হচ্ছে মানব সম্পদ। এই সম্পদকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপযোগী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জাপানসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজারে তরুণ প্রজন্মের বিপুল ঘাটতি পুরণের বিশাল সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব। এই লক্ষ্যে কম্পিউটারসহ ডিজিটাল শিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরাত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করতে হবে।
মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ জাপান জয়েন্ট ভেঞ্জার কোম্পানি( বিজেআইটি) এর যৌথ উদ্যোগে গতকাল শনিবার রাতে আয়োজিত দুই দিন ব্যাপী হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা কোড স্যামুরাই ২০১৯ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নওকি (ঘধড়শর ওঃড় ), বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, জাপান বহুমুখী বাণিজ্য সংস্থা – জেট্রো এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি অ্যান্ডো(ণড়লর অহফড়) এবং বুয়েট এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কায়কোবাদ বক্তৃতা করেন। প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক জাপানিজ ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় গত এগারো বছরে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম দেশ যে দেশটির নামের আগে ডিজিটাল শব্দ সংযুক্ত করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে পৃথিবীকে চমকে দেয়। এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ¯œাতকরা সারা পৃথিবীতে দক্ষতার সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৮০টি দেশে আইটি পণ্য রপ্তানি করছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি আরও বিস্তৃত। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার বিপ্লব বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সেই সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানব সম্পদকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।
মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর করতে না পারলে ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় এগিয়ে যাওয়া সম্বভ হবে না। তিনি বলেন ডিজিটাল প্রযুক্তির অভাবনীয় ভার্সন ফাইভজি একটি নতুন ডিজিটাল সভ্যতার জন্ম দিচ্ছে। এই সভ্যতা সারা পৃথিবীকে এমন পরিবর্তনের সূচনা করবে যা মানব সভ্যতা এর আগে দেখেনি। তিনি বলেন, ফাইভজির সাথে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যুক্ত হলে পৃথিবীতে যে সভ্যতার জন্ম হবে মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না।
হ্যাকাথন প্রচলিত প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা হতে একটু ভিন্ন মাত্রার হয় এবং একাদিক সমস্যার পরিবর্তে একটি বৃহৎ সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জটিল প্রোগ্রামিং এবং বাস্তবমুখী সমস্যা সমাধানের কৌশলের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য হ্যাকাথন বিশ্বব্যাপী একটি প্রচলিত এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। সর্বমোট ২৫টি স্বায়ত্বশাসিত পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৮৭টি দল প্রাথমিক বাছাই পর্বে আবেদন করেন এবং বাছাই পর্বের পর নির্বাচিত ৩৪ টি দল চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যা টানা ৩০ ঘন্টাব্যাপী চলে।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ডিইউ এক্সপুরি , দ্বিতীয় হয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উিইউ স্প্রিংবুকস দল। প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে খুলনা প্রকৌশলও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েট ম্যাঞ্জারো দল। মন্ত্রী বিজয়ীদের মধ্যে র্পুস্কার বিতরণ করেন।