বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি মানুষের মৌলিক অধিকার বলে মনে করছেন গবেষকেরা। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটকে মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
যুক্তরাজ্যের গবেষকেদের মতে, অনলাইনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও বিতর্ক বাড়তে থাকায় বিনা মূল্যের ইন্টারনেটকে অবশ্যই এখন মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এটি কোনো বিলাসবহুল সুবিধা নয়, বরং এটি নৈতিক মানবাধিকার। উন্নয়নশীল অনেক দেশে নাগরিকেরা ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে না। এতে তাদের জীবনযাত্রার মান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল বলেছে, ইন্টারনেটে বৈষম্য থাকলে মৌলিক স্বাধীনতা হিসেবে বাকস্বাধীনতা, তথ্যের স্বাধীনতা ও জমায়েতের স্বাধীনতা যথাযথ হবে না।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল এথিকসের প্রভাষক মার্টিন রেগলিটজ বলেন, ‘ইন্টারনেট মানুষের নৈতিক মানবাধিকার হিসেবে বৈশ্বিক এ মাধ্যমে মানুষকে অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের নজরদারি বা সেন্সর করা যাবে। যারা ইন্টারনেট পয়সা খরচ করে ব্যবহার করতে পারবে না, তাদের জন্য বিনা মূল্যে সুবিধা দিতে হবে।’
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাপ্লাইড ফিলোসফি’ সাময়িকীতে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের জীবনের অন্যান্য মৌলিক অধিকার যেমন স্বাধীনতা, অত্যাচার থেকে মুক্তির মতো বিষয়গুলোর মতোই ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে পারে। বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির মতো বিষয়গুলো এখন ইন্টারনেট সুবিধার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এখনকার সময়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক বিতর্ক অনলাইনে ঘটছে এবং সেসব তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। যাঁরা অনলাইনের আওতায় নেই, তাঁরা এসব তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ওই গবেষণায় ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানকে দায়বদ্ধ করে তোলার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘আরব বসন্ত’ ও ‘মি টু’ কর্মসূচিকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়।
জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত হিসাবে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৫১ শতাংশের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছেছে।
গবেষক রেগলিৎজ বলেন, ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে অনেক খরচ করার প্রয়োজন পড়ে না। ব্লগিং, তথ্য পাওয়া, ভার্চ্যুয়াল গ্রুপে যোগ দেওয়া, ই-মেইল আদান প্রদানের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজন নেই। বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষের কাছে এখন সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সুবিধাও নেই।