দীর্ঘ সময় ধরে টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তিত হয়ে যায়। এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনের বয়সে স্ক্রিন-টাইমের প্রভাবের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ‘দ্য জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’-এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৪৭ জন শিশুর ওপর এই গবেষণাটি চালানো হয়। যাদের মধ্যে ২০ জন ছেলে ও ২৭ জন মেয়ে শিশু ছিল। গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয় এবং তাদের দুইটি দলে ভাগ করেন গবেষকরা। একদল শিশু স্ক্রিনে কম সময় কাটায়, আরেকদল শিশু স্ক্রিনে বেশি সময় কাটায়।
গবেষণা প্রবন্ধটির প্রধান লেখক ডা. জন হাটন ও তার সহকর্মীরা গবেষণাটি করতে গিয়ে শিশুদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাদের সন্তানরা কতক্ষণ স্ক্রিনে সময় কাটান সেই সব তথ্য নেন।
শিশুদের স্ক্রিন-কিউ টেস্ট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা, ব্যবহার করার পরিমাণ এবং দেখার বিষয়বস্তু সব লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর ১৫টি প্রশ্নের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া শিশুরা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টিভি, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের স্ক্রিনে বেশি সময় কাটিয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের সাদা পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। জেনে রাখা ভালো যে, মস্তিষ্কের এই সাদা পদার্থের কাজ হলো- মস্তিষ্কের এক অংশ থেকে অন্য অংশে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছানো। এর ফলে ওই শিশুদের চিন্তাক্ষমতাসহ ভাষার দক্ষতা কমে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের কথা বলা থেকে শুরু করে পড়ার ক্ষমতাও ঠিকঠাকভাবে গড়ে ওঠে না।
হাসপাতালে এসব শিশুদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। তারা এই পরীক্ষায় কম নম্বর পায়। একই সঙ্গে, তাদের এমআরআই স্ক্যান করা হয়। তিনটি পরীক্ষা করে তাদের পরীক্ষা করা হয় ভাষা দক্ষতা। সেখানে তাদের শব্দ ব্যবহার, পড়া, তথ্য বোঝার ক্ষমতা নির্ণয় করা হয়।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক্সের (এএপি) মতে, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের ১ ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনে কাটানো উচিত নয়।
‘মাইলিন’ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে বার্তা বাহকের কাজ করে থাকে। কোনো রোগ কিংবা অন্য যে কোনো কারণে ‘মাইলিন’- এর পরিমাণ কমে গেলে, বার্তা পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে যায়। ফলে শিশুদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও অনেকটা কমে যায়।
যেসব শিশুরা স্ক্রিনে বেশি সময় কাটিয়েছে, তারা কগনিটিভ টেস্টেও কম নম্বর পেয়েছে। তাদের ভাষাদক্ষতাও তুলনামূলক কম। তারা নিজেদের চিন্তা ও অনুভবকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের চিহিৃত করে সেগুলোর নাম বলতেও তাদের ধীর গতি ছিল।
এ দিকে, গবেষণাটি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। সমালোচকরা বলেন, এই ফল বিভ্রান্তিকর। একই সঙ্গে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হলো কি না সেটা নিয়ে তাদের বাবা-মাকে চিন্তা করতে বারণ করেছেন তারা।