বিশ্বব্যাপী কয়েকটি টেলিযোগাযোগ বাজারে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের দিক থেকে ফোরজির চেয়ে ফাইভজির বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। উন্নত ও দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক সেবা ব্যবহারে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবে ফাইভজি স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১ সালে স্মার্টফোন নির্মাতারা বৈশ্বিক বাজারে ৪৫ কোটি ইউনিট
ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস সরবরাহে সক্ষম হবে এবং ২০২২ সালে এ সংখ্যা ৭৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছবে। গত মঙ্গলবার বিশ্বের বৃহৎ মোবাইল ফোনের চিপ সরবরাহকারী কোয়ালকমের পক্ষ থেকে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে কোয়ালকম জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ফাইভজির পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যে কার্যক্রম জোরদার করেছে সেলফোন অপারেটরগুলো। এ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকেও ফোরজির চেয়ে এগিয়েছে রয়েছে। এছাড়া ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ফলে সেলফোন অপারেটরগুলোর আয়ের নতুন পথ উন্মোচন হবে। ফলে টেলিযোগাযোগ সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে।
চীন ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুতে এগিয়ে রয়েছে। দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবাদে ফাইভজি চিপসেট সহজলভ্য হয়েছে। বিভিন্ন দামে হ্যান্ডসেট ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের জন্য ফাইভজি চিপ সরবরাহ করছে দেশটি। যে কারণে ফাইভজি স্মার্টফোনের দাম থ্রিজি কিংবা ফোরজি স্মার্টফোনের চেয়ে খুব বেশি হবে না বলে মনে করা হচ্ছে, যা ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রি বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
কোয়ালকমের আগের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ১৭ কোটি ৫০ লাখ থেকে ২২ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রি হবে। একই সময় ২০২১ সালে ফাইভজি স্মার্টফোন বিক্রিতে ১২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি কোয়ালকমের পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। কোয়ালকম ও বিশ্বের বিভিন্ন হ্যান্ডসেট নির্মাতা একে অন্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ডিভাইস নির্মাতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং কী পরিমাণ ফাইভজি চিপের ক্রয়াদেশ পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই এ পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভেরাইজন কমিউনিকেশন্স এরই মধ্যে কার্যক্রম থাকা কয়েকটি অঞ্চলে ফাইভজি নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু করেছে। আগামী বছর ফাইভজি নেটওয়ার্ক সেবা থেকে রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত আরো ৩০টি শহরে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকদের দাবি, পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভজি স্মার্টফোন ব্যবহার করে মোবাইল নেটওয়ার্কে থেকে ব্রডব্যান্ড কিংবা ওয়াই-ফাই সংযোগের চেয়ে আরো উন্নত ভিডিও দেখা ও গেম খেলার সুবিধা মিলবে। এ নেটওয়ার্কে ফাইল আদান-প্রদান অন্য যেকোনো নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির চেয়ে শতগুণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
অ্যাপল ব্যতীত সব নির্মাতাই ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিকে লক্ষ্য করে স্মার্টফোন উন্মোচন শুরু করেছে। চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে স্থানীয় বাজারে নিজেদের প্রথম ফাইভজি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। স্থানীয় বাজারে ‘মেট ২০এক্স ফাইভজি’র দাম ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৯৯ ইউয়ান (৯০১ ডলার)।
চীনভিত্তিক অপো গত মাসের শেষ দিকে ডুয়াল মোড ফাইভজি স্মার্টফোন আনার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে ডিভাইসটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হবে। ডিভাইসটিতে কোয়ালকমের ডুয়াল মোড ফাইভজি প্লাটফর্ম থাকবে, যা একই সঙ্গে স্ট্যান্ডঅ্যালোন (এসএ) এবং নন-স্ট্যান্ডঅ্যালোন (এনএসএ) নেটওয়ার্ক সমর্থন করবে। একই সময় ফাইভজির বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পণ্য ও অ্যাপ্লিকেশনের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের এ নেটওয়ার্ক কী কী অত্যাধুনিক সুবিধা দেবে ব্যবহারকারীদের, তা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২০ সালে একযোগে ১০টি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে শাওমি। ডিভাইস নির্মাতাদের সমন্বিত চেষ্টায় ফাইভজি স্মার্টফোনের চাহিদা আগামী এক দশক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, অপো ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ফাইভজি প্রযুক্তির দ্রুত ব্যবহার বাড়ার পথ সুগম হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলের ফাইভজি ব্যবহারকারীরা এরই মধ্যে অপোর ফাইভজি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারছেন।