জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম চলতি বছর শত শত পর্নোস্টার ও যৌনকর্মীর অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়েছে। অ্যাকাউন্ট ডিলিট ঠেকাতে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত জুনে বৈঠকও করেছেন তারা। তবে সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি এবং পর্নো তারকাদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট অব্যাহত রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানায়।
পর্নো তারকা ও যৌনকর্মীদের অভিযোগ, জনপ্রিয় মডেল বা সেলিব্রিটিরা যেভাবে এই মাধ্যমটি ব্যবহার করতে পারেন, তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
পর্নো তারকাদের সমিতি অ্যাডাল্ট পারফরমারস অ্যাক্টর্স গিল্ডের প্রেসিডেন্ট এলানা ইভান্স বলছেন, শ্যারন স্টোন এবং অন্যান্য তারকারা যেভাবে তাদের ভেরিফায়েড পেজ চালাতে পারেন, আমাদেরও সেভাবে ইনস্টাগ্রাম চালাতে পারার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতি এই বৈষম্যের কারণ হচ্ছে জীবিকার জন্যে আমরা যা করছি সেটা তাদের পছন্দ নয়।
ইভান্সের গ্রুপটি এরকম প্রায় দেড় হাজার জনেরও বেশি পর্নো তারকার একটি তালিকা তৈরি করেছে, যাদের অ্যাকাউন্ট ইনস্টাগ্রামের মডারেটর ডিলিট করে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, নগ্ন চিত্র কিংবা যৌনতার কোনো ছবি না দেওয়া সত্ত্বেও সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটির কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা রীতিনীতি ভঙ্গ করায় এসব অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পর্নো তারকা জেসিকা জেমিসের মৃত্যুর পর তার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়ার পর ইভান্স খুব হতাশ হন। তিনি বলেন, ‘যখন দেখলাম জেসিকার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তখন আমার হৃদয় ভেঙে পড়েছিল। ওটাই ছিল শেষ খড়কুটো।
জানা গেছে, ওই অ্যাকাউন্টের অনুসারী ছিল ৯ লাখেরও বেশি। পরে অবশ্য ওই অ্যাকাউন্ট আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়।
গত বছরের শেষের দিকে অ্যাডাল্ট পারফরমাররা অভিযোগ করেন, কোনো একজন ব্যক্তি বা এক দল ব্যক্তি মিলে তাদের অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের পরিষ্কার উদ্দেশ্য ছিল এসব অ্যাকাউন্ট ডিলিট করানো। তাদের দাবি, তাদেরকে বিভিন্ন রকমের বার্তা দিয়ে হয়রানি করা হতো, ভয়-ভীতি দেখানো হতো।
জানা গেছে, ওই ব্যক্তিটি ছিল অজ্ঞাত, তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ বিষয়ে পর্নো তারকারা ভাষ্য, ‘ওমিড’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তাদেরকে বার্তা পাঠিয়ে হয়রানি করা হতো।
পর্নো তারকা ও যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন জিঞ্জার ব্যাঙ্কস। যৌনকর্মীদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন আপনি তিল তিল করে একটি অ্যাকাউন্ট গড়ে তোলেন এবং সেখানে তিন লাখের বেশি মানুষ আপনাকে অনুসরণ করে, এবং তার পরে ওই অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দেয়া হ,য় তখন মনে হবে যে আপনি হেরে গেছেন।’
তিনি মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অ্যাডাল্ট পারফরমারদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিয়ে তাদেরকে আসলে বাজার থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বেশিরভাগ পর্নো তারকাই তাদের এসব বিভিন্ন ভিডিওর প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনের জন্য ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। তাই এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে তারা বড় একটা বাজার হারিয়ে ফেলবেন বলে আশঙ্কা তাদের।
এ বিষয়ে ইনস্টাগ্রামের মালিক ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে নানা ধরনের লোকেরা আছেন। সে কারণে আমাদেরকে নগ্নতা ও যৌনতার বিষয়ে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়, যাতে করে সবাই এটা দেখতে পারে, বিশেষ করে তরুণ ছেলেমেয়েদের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ রিপোর্ট করলেই হয় না, সেটা যদি নিয়মকানুন ভঙ্গ করে থাকে তখনই ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে আপিল করারও সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর আর যদি দেখা হয় যে, ভুল করে কোনো অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে ফেলা হয়েছে, তখন তো সেটা আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়।’
ফেসবুকের সর্বশেষ কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসারে, সেখানে কোনো ব্যবহারকারী নগ্ন ছবি চাইতে ও দিতে পারে না। যৌনতা সম্পর্কিত কনটেন্টও ব্যবহার করতে পারে না।