যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিযোগিতা ও বিপণন কর্তৃপক্ষ (সিএমএ) মনে করে, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্যে আরো কঠোর আইন করা উচিত। কারণ ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে এসব কোম্পানির আধিপত্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। সেই সঙ্গে এসব প্লাটফর্ম যারা ব্যবহার করেন, তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। খবর বিবিসি।
ইন্টারনেটে গুগল, ফেসবুকের মতো কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নতুন ডিজিটাল ওয়াচডগ নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে ব্রিটিশ সরকার। এমন খবর প্রকাশের পর সিএমএর পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রণয়নের পরামর্শ এল।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন আইনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতাবলে তারা প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোকে নতুন আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে পারবে, পাশাপাশি ব্যবহারকারী তাদের তথ্যে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
ব্রিটেনে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজারের ৯০ শতাংশই গুগলের দখলে। সার্চ জায়ান্টটি এ দেশ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ বছরে ৬০০ কোটি পাউন্ড রাজস্ব পায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফেসবুক। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের অনলাইন ডিসপ্লে বিজ্ঞাপনের প্রায় অর্ধেক বাজার দখলে রেখেছে এ সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট। ২০১৮ সালে ব্রিটেন থেকে ফেসবুকের আয় ২০০ কোটি পাউন্ড।
সিএএম অবশ্য অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলেছে, বৃহদায়তনের হওয়া খারাপ কিছু নয়। তাছাড়া এ দুটি কোম্পানি অনেক সৃজনশীল পণ্য ও সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু গুগল ও ফেসবুক যুক্তরাজ্যের বাজারে গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসে গেলে নিদেনপক্ষে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো হবে না। কারণ বাজারে প্রকৃত প্রতিযোগিতা না থাকা মানে গ্রাহকদের বিজ্ঞাপন ব্যয় বৃদ্ধি। এর আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো, এ দ্বৈত আধিপত্যের কারণে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর অনেক সৃজনশীল ধারণা মাঠে মারা যাবে, মানুষ নতুন নতুন উদ্ভাবন থেকে বঞ্চিত হবে।
এছাড়া গুগল ও ফেসবুকের বাজার আধিপত্য পত্রপত্রিকা এবং মূল্যবান কনটেন্ট সৃষ্টিকারী অন্য প্রকাশকদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলছে। কারণ বড় প্লাটফর্মের বাড়বাড়ন্তের কারণে বিজ্ঞাপন রাজস্বে তাদের অংশ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে, ফলে প্রচলিত গণমাধ্যমের আয় কমে যাচ্ছে। তাছাড়া এসব কোম্পানি ঠিক কীভাবে কাজ করে তা স্পষ্ট নয়। অনেক প্রকাশক অভিযোগ করেন, গুগল ও ফেসবুকের পক্ষপাতমূলক অ্যালগরিদমের কারণে তাদের ট্রাফিক কমে যাচ্ছে।
এ তো গেল বিজ্ঞাপনের বাজার নিয়ে প্রতিযোগিতা ও বিপণন কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তাও এখন বড় ইস্যু। আর এসব জায়ান্ট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার কাজে লাগিয়ে যে কোনো প্লাটফর্মের চেয়ে কার্যকরভাবে সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে। ফলে বিজ্ঞাপনদাতারাও এ দুটি প্লাটফর্মকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রতিযোগিতা দুই কারণেই মানুষের মধ্যে এ অনুভূতি ও আত্মবিশ্বাস রাখা জরুরি যে নিজস্ব তথ্যের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সব সময় এটা হচ্ছে না। যেমন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে কিছু তথ্য দিতে বাধ্য করছে। তার সেবা নিতে হলে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতেই হয়।
সিএমএ বলছে, এসব কারণেই এদের নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর আচরণ নির্দেশক এবং ব্যক্তিতথ্যের ওপর ব্যবহারকারীর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে এমন আইন করতে হবে।
এদিকে ব্রিটেনের নবনির্বাচিত সরকার নতুন আইন না করলেও নিজস্ব ক্ষমতাবলেই এসব বিষয়ে নজরদারি করার ক্ষেত্রে তাদের এখতিয়ার রয়েছে বলে দাবি করেছে সিএমএ।
তবে যুক্তরাজ্যে গুগল ও ফেসবুক সিএমএ অনেক বক্তব্যের সঙ্গেই দ্বিমত করেছে। তাদের যুক্তি, ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ও বিনিময়ে ব্যবহারকারীর যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া আছে। তাছাড়া বিজ্ঞাপন দেখানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে দাবি করেছে ফেসবুক।