অনলাইনে অর্ডার করলেই কম দামে কিংবা বিশেষ মূল্য ছাড়ে পাওয়া যেত আইফোন। কম দামে আইফোন দেখে অনেকেই তা লুফে নিতেন। দামে কম হওয়ায় কিংবা ছাড় থাকায় ক্রেতার সংখ্যাটাও অনেক বেশি। এসব আইফোন বিক্রি করে প্রতিদিন লেনদেন হতো কয়েক লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আইফোন কিনলেও সবই ছিলো নকল। রাজধানীর মোতালেব প্লাজার একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চলছিলো আইফোন তৈরির কাজ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে অভিযান চালিয়ে মার্কেটটিতে নকল আইফোন তৈরির দোকানের সন্ধান পায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। অভিযানে সহযোগিতা করেন বিটিআরসির সহকারী পরিচালক কাজী মাঈনুল হাসান ও র্যাব-৩ এর উপ-অধিনায়ক মেজর রাহাত আমিন খান।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, মোতালেব প্লাজার পঞ্চম তলায় ‘ক্লাসিক টেলিকম’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দুইমাস ধরে দোকান ভাড়া নিয়ে নকল আইফোন তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছিল। অভিযানের খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি তালা দিয়ে পালিয়ে গেলে পরে তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে। এসময় আইফোন ছাড়াও স্যামসাং, ওয়ান প্লাস, অপ্পো, শাওমি, ভিভো ও নকিয়াসহ বিভিন্ন ব্যাণ্ডের সেট তৈরির সিল ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। অভিযানে আটটি প্রতিষ্ঠানকে ১২লাখ টাকা জরিমানা এবং একজনকে একবছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, অনলাইনে নকল আইফোন বিক্রির একটি দোকান পাওয়া গেছে। যেখানে আইফোনের নকল মোবাইল, চার্জার, ব্যাটারি এবং হেডফোন পাওয়া গেছে। এই সমস্ত মোবাইল সেট যারা তৈরি এবং বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের কারণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে।
এসব মোবাইল ব্যবহারের কারণে হাই রেডিয়েশনে সাধারণ ব্যবহারকারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে জানিয়ে সারওয়ার আলম আরও বলেন, অল্প সময়ে এসব ফোন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের ই-ওয়েস্টে বা ইলেক্ট্রনিকস বর্জ্যের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। একটি অরিজিন্যাল মোবাইল সেট তিনবছর থেকে পাঁচবছর যাবে কিন্তু ক্লোন বা নকল সেট, যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে একমাস বা ছয়মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কারণে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি এবং এই ধরনের অভিযান অব্যাহৃত থাকবে।
ক্রেতারা কিভাবে বুঝবে মোবাইল আসল নাকি নকল? এমন প্রশ্নে সারওয়ার আলম জানান, প্রথম দেখাতে আসল নকল বোঝা অনেক কঠিন। তবে বিটিআরসির আইএমইআই নম্বর চেক করার জন্য একটি নম্বর রয়েছে। আইএমইআই লিখে ওই নম্বরে এসএমএস করলে ফিরতি ম্যাসেজেই বোঝা যায় মোবাইলটি আসল নাকি নকল।
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, যেসব মোবাইল জব্দ করা হয়েছে সব আমরা ধ্বংস করে দিবো। তাছাড়া এসব মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিস্ট কর্মকাণ্ড ঘটছে। বিভিন্ন সময় আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে অপরাধ কর্মকাণ্ড চলছে। একইসঙ্গে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।