বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ইস্যু ও জনবিক্ষোভ দমনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের প্রবণতা বাড়ছে। যে কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। গত বছর বিভিন্ন ইস্যু কেন্দ্র করে বারবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করায় শুধু ভারতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই বছর বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮০৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১৫-১৬ সালের চেয়ে ২৩৫ শতাংশ বেশি। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
বৈশ্বিক ইন্টারনেট ডাটা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান টপ১০ভিপিএনের ‘দ্য গ্লোবাল কস্ট অব ইন্টারনেট শাটডাউন ইন ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ভারতে একাধিক ইস্যু কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মোট ৪ হাজার ১৯৬ ঘণ্টা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ এখন ভারত। ইন্টারনেট বন্ধের আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ যথাক্রমে ইরাক ও সুদান। দেশ দুটিতে রাজনৈতিক ইস্যু কেন্দ্র হরহামেশাই সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।
টপ১০ভিপিএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন ইস্যু কেন্দ্র করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা এখন একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার রাজনৈতিক ইস্যু চাপা দেয়া, জনবিক্ষোভ ঠেকানো ও কোনো ইস্যু কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের সংগঠিত হওয়া ঠেকাতে দেশজুড়ে কিংবা নির্দিষ্ট অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখছে।
সাম্প্রতিক সময় ভারতে সরকারের নির্দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘটনা বেড়েছে। গত মাসে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশটিতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদি সরকারের নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দ্রুত বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ দমন এবং প্রতিরোধকারীরা যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সেজন্য সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। গত সপ্তাহেও দেশটির উত্তর প্রদেশের কমপক্ষে ১৮টি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।
টপ১০ভিপিএনের ‘দ্য গ্লোবাল কস্ট অব ইন্টারনেট শাটডাউন ইন ২০১৯’ শীর্ষ প্রতিবেদনের লেখক সিমন মিগলিয়ানো বলেন, সাম্প্রতিক সময় ভারতে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘটনা বেড়েছে। গত বছর দেশটিতে বিভিন্ন সময় কমপক্ষে ১০৬ বারের বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। তবে ইন্টারনেট বন্ধের অনেক ঘটনাই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
২০১৮ সালের এপ্রিলে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২-১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধে ভারতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০৪ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। একই সময় ১৬ হাজার ৩১৫ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।
রয়টার্স এর আগে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, রাজনৈতিক ইস্যু কেন্দ্র করে বারবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করায় দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলো প্রতি ঘণ্টায় ২ কোটি ৪৫ লাখ রুপি (৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার) রাজস্ব লোকসান দিচ্ছে।
ভারত সরকার নতুন নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাস করার তিন সপ্তাহের মাথায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান এ বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটির সরকার হাজারো কৌশল অবলম্বন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সংক্ষিপ্ত নির্দেশে দ্রুততম সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা। কারণ দেশটির সাধারণ মানুষ নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সংগঠিত হতে ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ফেসবুকের মতো সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক ইস্যু কেন্দ্র করে ভারত সরকারের ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করাদের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।