বিশ্বের বৃহৎ এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা যথাক্রমে স্যামসাং ও হুয়াওয়ে। দুই প্রতিষ্ঠান এখন স্মার্টফোনে নিজস্ব প্রসেসর চিপসেট ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ দুই ডিভাইস নির্মাতার এমন উদ্যোগে চিপসেট ব্যবসায় বাজার হারাচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোয়ালকম। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিটের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ও চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহকৃত ডিভাইসের ৩০ শতাংশে নিজস্ব প্রসেসর চিপসেট ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি উভয় প্রতিষ্ঠান ডিভাইসে নিজস্ব প্রসেসরের ব্যবহার ক্রমে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। স্যামসাং ও হুয়াওয়ের এমন উদ্যোগের কারণে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তৃতীয় পক্ষের ক্রেতাদের কাছে কোয়ালকমের প্রসেসর চিপসেট সরবরাহ কমেছে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ।
এ বিষয়ে আইএইচএস মার্কিটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জেরিট স্নিমান বলেন, টানা কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার খারাপ সময় পার করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে ডিভাইস নির্মাতারা। এক্ষেত্রে স্যামসাং ও হুয়াওয়ের মতো শীর্ষ ডিভাইস নির্মাতারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র সরঞ্জামের জন্য তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে জোর দিচ্ছে এবং ডিভাইসে নিজস্ব চিপ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, স্যামসাং গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সরবরাহকৃত ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ মিড-রেঞ্জের স্মার্টফোন এবং গ্যালাক্সি এ সিরিজের প্রায় সব স্মার্টফোনে নিজেদের এক্সিনোস প্রসেসর ব্যবহার করেছে, যা ২০১৮ সালের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। স্যামসাং সামগ্রিকভাবে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যত সংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে তার ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশে এক্সিনোস প্রসেসর ব্যবহার করেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
আইএইচএস মার্কিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাং স্মার্টফোনে মিডিয়াটেক ও কোয়ালকম প্রসেসরের অংশীদারিত্ব ছিল যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত বছর কমে যথাক্রমে ২ দশমিক ৩ শতাংশ ও ২২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহকৃত মোট স্মার্টফোনের ৭৪ দশমিক ৬ শতাংশে নিজস্ব কিরিন প্রসেসর ব্যবহার করেছে হুয়াওয়ে, যা এর এক বছর আগের ৬৮ দশমিক ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি। আগে সাধারণত শুধু ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোয় নিজস্ব কিরিন প্রসেসর চিপসেট ব্যবহার করত প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন বিভিন্ন রেঞ্জের ডিভাইসে কিরিন প্রসেসর ব্যবহার করছে হুয়াওয়ে। এর মধ্যে নোভা এবং ওয়াই সিরিজের মিড-রেঞ্জের ডিভাইসও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধ ও নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা ইস্যু কেন্দ্র করে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন প্রযুক্তি ক্রয় বন্ধ হয়ে যায় হুয়াওয়ের। অন্যায্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেদের স্মার্টফোনে মার্কিন প্রযুক্তি বর্জনে অনেকটা নীরবে কাজ করছে হুয়াওয়ে। এর আগে ডিভাইসে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেলে যাতে বেগ পেতে না হয়, সেজন্য নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম উন্মোচন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোয়ালকমের প্রসেসর ব্যবহার থেকে সরে আসছে হুয়াওয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে হুয়াওয়ে বৈশ্বিক বাজারে যত সংখ্যক স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে তার ২৪ শতাংশে ছিল কোয়ালকম প্রসেসর, যা গত বছর তৃতীয় প্রান্তিকে কমে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে কোয়ালকমের প্রসেসরের অংশীদারিত্ব কমলেও তাইওয়ানভিত্তিক মিডিয়াটেকের প্রসেসরের অংশীদারিত্ব বেড়েছে। গত বছর তৃতীয় প্রান্তিকে সরবরাহকৃত হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশে ব্যবহূত হয় মিডিয়াটেকের প্রসেসর, যা এর এক বছর আগের একই প্রান্তিকে ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শীর্ষস্থানীয় ছয় ডিভাইস নির্মাতা স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অ্যাপল, শাওমি, অপো ও ভিভো বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ৭৭ শতাংশ দখলে রেখেছে। এর মধ্যে অ্যাপল শতভাগ মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসর ব্যবহার করে আসছে। এখন শাওমি, অপো এবং ভিভো কোয়ালকম ও মিডিয়াটেকের প্রধান প্রসেসর ক্রেতার তালিকায় রয়েছে।