বিশ্বের বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি প্রকল্পে অংশগ্রহণের অনুমোদন না দিতে প্রচারণা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিত্র দেশগুলোকে ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটির সরঞ্জাম বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
এবার হুয়াওয়ে সরঞ্জামের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যারা ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছেন, তারা প্রতিষ্ঠানটির বিকল্প কী তা বলুন। হুয়াওয়ের পরিবর্তে কোন প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অধিক নিরাপদ থাকা যাবে, তা জানতে চেয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্য যাতে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সেজন্য দেশটিতে একদল সরকারি কর্মকর্তা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যে দলটি গত সোমবার যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে হুয়াওয়ের সরঞ্জামের ঝুঁকিসংক্রান্ত নতুন তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে। যেখানে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে পাগলামি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য চলতি মাসের শেষ দিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে দেশটির ফাইভজি সম্প্রসারণে হুয়াওয়ের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা হুয়াওয়ের সরঞ্জামের ঝুঁকিসংক্রান্ত যেসব নতুন তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে তা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পছন্দ হয়নি। গত মঙ্গলবার বিবিসি টিভিকে জনসন বলেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সম্ভাব্য সেরা প্রযুক্তি সংযোগের সুবিধা থাকার অধিকার রয়েছে। যদি মানুষ একটি ব্র্যান্ড বা অন্য কিছু ব্যবহারের বিরোধিতা করে, তবে অবশ্যই এর বিকল্প তাদের জানাতে হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি চাই না কোনো অবকাঠামোতে প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে কুসংস্কারের কারণে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের বিষয়টি আটকে থাকুক।
সম্প্রতি হুয়াওয়েকে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি প্রকল্পে অংশগ্রহণের অনুমোদন দেয়া দেশগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করতে নতুন একটি বিল এনেছেন মার্কিন সিনেটর টম কটন। বিলটি পাস হলে যেসব দেশ ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়েকে অংশ নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে, সে দেশগুলোর সঙ্গে সব ধরনের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেয়া হবে।
টম কটনের প্রস্তাবিত বিলটি যদি আইন আকারে পাস হয়, তবে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যকার সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহারকারী অন্য দেশের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
হুয়াওয়ে বিশ্বের বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতাই নয়; দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতাও। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির সরঞ্জামকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। হুয়াওয়ে গোপনে চীন সরকারের কাছে তথ্য তুলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্রও এখন পর্যন্ত তাদের অভিযোগের সপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অথচ সরঞ্জামের নিরাপত্তা ত্রুটির অভিযোগে গত বছর হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন প্রযুক্তি ক্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
গত সপ্তাহে টেলিযোগাযোগ খাতের বৃহত্তম বাজার ভারতে ফাইভজি ট্রায়ালে অংশগ্রহণের অনুমতি পেয়েছে হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর কয়েকটি মিত্র দেশের চাপে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ভারত সরকারের হুয়াওয়েকে ফাইভজি ট্রায়ালে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়াকে ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে। কারণ পঞ্চম প্রজন্মের আল্ট্রা-হাইস্পিড মোবাইল নেটওয়ার্ক ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে হুয়াওয়ে। ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণ ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্ব্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
হুয়াওয়ের এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারত সরকার ফাইভজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ট্রায়ালে অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে হুয়াওয়েকে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। হুয়াওয়ে তাদের টেলিকম সরঞ্জামের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের তথ্য চীন সরকারের কাছে পাচার করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের শিকার হুয়াওয়ে বিষয়ে কিছুটা দেরিতে হলেও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল ভারত। এর আগে মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও ইতালির কাছ থেকেও ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পায় হুয়াওয়ে।
বিবৃতিতে হুয়াওয়ে জানিয়েছে, ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত দেশটিতে পঞ্চম প্রজন্মের দ্রুতগতির টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি স্থাপনে তাদের প্রত্যাশাকে বহু গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।