২০২০ সালের জন্য মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেড। তাইওয়ানভিত্তিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা ও বিক্রি বৃদ্ধি তাদের ব্যবসায় বাড়তি মুনাফা যোগ করবে। এ কারণে চলতি বছর মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসা জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
টিএসএমসি চলতি বছর মূলধনি ব্যয় বাড়িয়ে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার নির্ধারণ করেছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৪০০ কোটি থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার মূলধনি ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। তবে গত বছরজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির মূলধনি ব্যয় ১ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্বের শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা টিএসএমসি। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের নাজুক পরিস্থিতির কারণে কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। দ্রুতগতির এ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সুবিধা পেতে দরকার ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন। যে কারণে স্মার্টফোনের চাহিদা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে টিএসএমসি। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার কিছুটা চাহিদা প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই মূলধনি ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা বাড়াতে চাইছে টিএসএমসি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক বাজারে স্মার্টফোনের সরবরাহ ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১৪০ কোটি ইউনিটে পৌঁছাবে। এর মধ্যে ১৯ কোটি স্মার্টফোন থাকবে ফাইভজি সমর্থিত। অর্থাৎ চলতি বছর মোট যতসংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ হবে, তার ১৪ শতাংশই থাকবে ফাইভজি সমর্থিত। বিশ্বব্যাপী ফাইভজি ফোনের চাহিদা বৃদ্ধিকে মুনাফা আয়ের নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছে টিএসএমসি।
এ বিষয়ে আইডিসির ওয়ার্ল্ডওয়াইড মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাকার্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক সংগীতিকা শ্রীবাস্তব বলেন, নতুন প্রজন্মের ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিস্তার অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণ। এরপরে রয়েছে সেলফোন অপারেটরগুলোর সমর্থন ও ফাইভজি হ্যান্ডসেটের মূল্যহ্রাস। বিশ্বের প্রায় সব সেলফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান ফাইভজি প্রযুক্তিতে টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিতে কার্যক্রম জোরদার করেছে। বিনিয়োগের অংকও বাড়িয়েছে সেলফোন অপারেটরগুলো। কাজেই চলতি বছর স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
বিশ্বের অন্যতম মোবাইল চিপ সরবরাহকারী কোয়ালকম। এক পূর্বাভাসে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আগামী বছর বিশ্বজুড়ে ফাইভজি ফোন সরবরাহ ৪৫ কোটি এবং ২০২২ সালে ৭৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছাবে, যা স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
টিএসএমসির গ্রাহক তালিকায় রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল, কোয়ালকম ও চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) রাজস্ব ১ হাজার ২০ কোটি থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছে, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৭১০ কোটি ডলার।
গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে টিএসএমসির রাজস্ব ১০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে রাজস্ব আয় ১ হাজার ২০ কোটি থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছিল টিএসএমসি। এছাড়া অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফাও ১৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩৮৮ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের শেষ দিকে উৎসব মৌসুম সামনে রেখে অ্যাপল, স্যামসাংসহ প্রায় সব শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নতুন স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। পাশাপাশি ফাইভজি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো নতুন প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে টিএসএমসির হাইপারফরম্যান্স ৭ ন্যানোমিটার চিপের চাহিদা সামনে আরো বাড়বে। এতে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ও মুনাফা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।