২০১২ সালের মার্চে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্লে স্টোরের জন্য অ্যাপ ডেভেলপারদের ৮ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ পরিশোধ করেছে গুগল। গত সোমবার প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পর টুইটারে এক ঘোষণায় এমন তথ্য জানান গুগলের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরোশি লকহিমার।
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের মতো যেকোনো মোবাইল প্লাটফর্মের মেরুদণ্ড মনে করা হয় তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের। বিভিন্ন মোবাইল প্লাটফর্মকে সমৃদ্ধিশালী করতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বতন্ত্র অ্যাপ ডেভেলপারদের কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের গুরুত্ব বুঝেই তাদের নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করে আসছে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের মতো মোবাইল প্লাটফর্মের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে গুগল তাদের প্লে স্টোর মার্কেট প্লেস চালুর পর এ পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপারদের যে অর্থ পরিশোধ করেছে, তা অ্যাপলের চেয়ে বেশ কম। ২০১৮ সাল শেষেই আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ডেভেলপারদের পরিশোধ করা অর্থের অংকটা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ অ্যাপ স্টোর ডেভেলপাররা প্রতিদ্বন্দ্বী সেবা গুগলের প্লে স্টোর ডেভেলপারদের চেয়ে প্রায় ৬৪ শতাংশ বেশি অর্থ আয় করেছেন। গত এক দশকে মোবাইল অ্যাপ স্টোর অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য আয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
গত বছরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ ১০০ অ্যাপ স্টোর ডেভেলপার গড়ে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার আয় করেছেন। অন্যদিকে গুগল প্লে স্টোরের শীর্ষ ১০০ ডেভেলপার গড়ে আয় করেছেন ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অ্যাপ স্টোর ও প্লে স্টোরের ডেভেলপারদের আয়ে পার্থক্য থাকলেও উভয় মার্কেট প্লেস ক্রমে বড় হচ্ছে, যা বৈশ্বিক মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যালফাবেটের আর্থিক খতিয়ানে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেড়ে ৪৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। একই প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে অ্যালফাবেটের রাজস্ব ১৭ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তবে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে এর আগের দুই বছরের তুলনায় শ্লথগতি দেখা গেছে।
ভিডিও স্ট্রিমিং ব্যবসার দিক থেকে অন্যদের তুলনায় গুগল নিয়ন্ত্রিত ইউটিউব দ্রুত বড় হচ্ছে। তবে ক্লাউড ব্যবসায় এখনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেকাংশে পিছিয়ে আছে গুগল। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান অনুযায়ী, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তারা ক্লাউড ব্যবসা থেকে আয় করেছে ২৬০ কোটি ডলার। যেখানে অ্যামাজনের আয় ১ হাজার কোটি ডলার। তবে ক্লাউড ব্যবসায় তুলনামূলক দেরিতে নজর দিয়েছে গুগল। সে হিসাবে এ খাতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বেশ সন্তোষজনক। গত প্রান্তিকে গুগলের ক্লাউড ব্যবসা বিভাগের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশেরও বেশি ছিল।
গুগলের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্ম থেকেও আয় গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ১৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৭২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গত প্রান্তিকে অ্যালফাবেট মুনাফা দেখিয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় মুনাফা ১৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে অবশ্য গুগলের খরচও বেড়েছে ১৮ শতাংশ। ডাটা সেন্টার স্থাপন ও নতুন কর্মী নিয়োগসহ সামগ্রিকভাবে প্রান্তিকে ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার।
গত বছর অ্যালফাবেটের রাজস্বে ইউটিউবের অবদান ছিল ১০ শতাংশ। ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। গত প্রান্তিকে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন থেকে আয় বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে গুগলের আয় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮৬ শতাংশ।