বাংলাদেশ সফটওয়্যার খাতের উদ্যোক্তাদের হাত ধরে নতুন দশকে নতুন প্রযুক্তি সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত দেশের সফটওয়্যার খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে দেশীয় অনেক অভিনব উদ্যোগ দেশের বাইরে সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে শুধু শহরে নয়; সরকার জেলা-উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে বেসিস।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটি খাতের আয় ৫০০ কোটি ডলারে উত্তীর্ণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন ও নতুন দশকের প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে চলতে দেশের সফটওয়্যার খাতে নানা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) মহাসচিব জেমস পয়জ্যান্টস বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ ভালো করছে এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বলে উইটসা ঢাকাকে বেছে নিয়েছে বিশ্ব সম্মেলন করার জন্য। বাংলাদেশ ‘ভিশন ২০২১’ সামনে রেখে আইসিটিতে এগিয়ে চলছে। যেকোনো দেশের সফলতার মূল বিষয় হলো নেতৃত্ব, যা বাংলাদেশের আছে।
পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি নতুন দশকের শুরুতে মানুষের কাছে চলে আসবে। এ প্রযুক্তির কল্যাণে আসবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিকস ও বিগ ডাটা অ্যানালাইসিসের মতো নানা কাজ। প্রয়োজন হবে দক্ষ কর্মীর। আগামী এক দশকের মধ্যে আরো নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এসে নতুন চাকরি সৃষ্টি করবে এবং প্রচলিত অনেক চাকরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই যুগোপযোগী দক্ষ কর্মী তৈরি করতে দেশীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে।
মিডিয়াসফট ডাটা সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল দেবনাথ বলেন, তিনি দেশের সফটওয়্যার খাতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। খুচরা বিক্রি খাতের ডিজিটাইজেশন বা অটোমেশনে রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের অসাধারণ ভূমিকা। সফটওয়্যার বাজারে দেশী সফটওয়্যারের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা তার একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সফটওয়্যারের আওতাভুক্ত করা জরুরি। নতুন প্রযুক্তিকে যুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা নতুন প্রযুক্তি ও নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি, বিশেষ করে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা চালুর মধ্যেই সীমিত থাকবে না এ দশক। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি আসবে। পুরনো পণ্যসেবাগুলোর জায়গায় হালনাগাদ পণ্যসেবা দ্রুত চালু হবে। এরই ধারাবাহিকতায় স্মার্টফোনের সক্ষমতা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ক্লাউড কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রিয়েল-টাইম স্পিচ রিকগনিশন, ন্যানো কম্পিউটার, ওয়্যারেবল ডিভাইস ও নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন, সাইবার সিকিউরিটি, স্মার্ট সিটিজ, ইন্টারনেট সেবা আরো উন্নত হবে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিকাশ এ দশকে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির দিশা পুরোদমে পাল্টে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এখন থ্রিডি প্রিন্টিং ও বায়োমেট্রিকস চালুর বিষয়েও জোরালোভাবে কথা বলছেন। অনলাইন কার্যক্রমে এখন যেভাবে নতুন নতুন ডিভাইস, কৌশল ও প্রবণতা ব্যাপক হারে চালু ও বিকশিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের লাইফস্টাইল বা জীবনধারাকে আমূল পাল্টে দেবে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে প্রশাসন, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিক্ষাসহ সব খাতে আরো অধিক হারে স্মার্ট মেশিন ও প্রক্রিয়াগত প্রযুক্তির প্রচলন ও ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। এর ফলে আমাদের লাইফস্টাইল বা জীবনধারার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের কাজকর্মেও তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।